রোহিঙ্গাদের হাতিয়ায় নয় অন্যত্র পুনর্বাসন করা হোক by এ এইচ এম বাবুল

মায়ানমারের বিতাড়িত অধিবাসীরা দীর্ঘ বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। কক্সবাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার মায়ানমার এলাকার রাখাইন অধিবাসীদের এখন হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচর এলাকায় স্থায়ী পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার এলাকায় মানব পাচার, মাদকদ্রব্য ব্যবসা, হিরোইন ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এই রোহিঙ্গাদের হাতিয়ায় পুনর্বাসন উপজেলার প্রায় ৬ লাখ লোক মেনে নেবে না। শান্তিপ্রিয় হাতিয়াবাসী বুকের তাজা রক্তদিয়ে তা প্রতিহত করবে।
সম্প্রতি নরওয়ের রাজধানী অসলোয় অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে নোবেলজয়ীরা রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিদ্যমান এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারকে আহবান জানিয়েছেন। রাখাইন রাজ্যে মুসলমান এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস পুনস্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার জন্যও সরকারকে অনুরোধ করেন।
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বহু বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাসকারী বাঙালীদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের সরকার তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করে স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দি গার্ডিয়ানে’ রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইসলামের মন্তব্যে বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার কোন আবাস বা পরিকল্পনা তাদের নেই।
A Rohingya leader urged the government to rethink, saying the plan would only make life worse for the refugees, many of whom have been languishing in the camps for years. “We want the government and international organisations to resolve our issue from here,” said Mohammad Islam, who lives in one of the camps.
গত কয়েকদিন যাবৎ দেশের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকাসহ প্রায় সকল গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারলাম বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক সময়ের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে সরকার অতিষ্ঠ হয়ে তাদেরকে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে তারা মাদক, ইয়াবা ব্যবসা এবং মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। শুধু দেশে নয় বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে গিয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে দেশের বদনাম কামিয়েছেন বলে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে।
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় ২১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬ লক্ষ লোকের বসবাস। হাতিয়াবাসী শান্তিতে বসবাস করছে। উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ার কারণে ঝড় জলোচ্ছ্বাস বুকে ধারণ করেই বেঁচে আছেন। কৃষি প্রধান এই বাংলাদেশের চিনাবাদামের চাহিদার প্রায় অর্ধেকটাই পূরণ করে হাতিয়াবাসী। এছাড়া ধান, ডাল, আলু উৎপাদন করে জাতীয় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও অবদান রাখছে। ইলিশ মাছসহ মৎস শিকারীতেও জাতীয় অর্থনীতির অংশীদার। ঠেঙ্গারচরে বনবিভাগের ১২ হাজার একর ভুমিতে হাতিয়াবাসীকে এখনই বন্দোবস্তের ব্যবস্তা করলে কর্মঠ হাতিয়াবাসী ঠেঙ্গারচর থেকে সোনা ফলিয়ে সরকারের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
কর্মঠ এই অধিবাসীদের অলস জাতিতে পরিণত করার কুটকৌশলে কিছু স্বার্থান্বেশী মহল লিপ্ত হয়েছেন বলে উপজেলার সুশীল সমাজ দাবী করেছেন। কারণ কক্সবাজার এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শরণার্থীদের জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে তাদেরকে সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচর এলাকায় এদের জায়গা দিলে শান্তিপ্রিয় হাতিয়াবাসীর উৎপাদনের মস্তিষ্ককে অলস বানিয়ে ছাড়বে, উপজেলার অধিবাসীদের মাদক ব্যবসাসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত করবে। ফলে উৎপাদনের মস্তিষ্ক শয়তানের মস্তিষ্কে পরিণত হবে। এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচলন হবে। খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, রাহাজানি বেড়ে যাবে। মাদক, ইয়াবা, মানব পাচারের একটা ট্রানজিটে পরিণত হবে।
এ এইচ এম বাবুল
রোহিঙ্গাদের হাতিয়ায় পুর্বাসনের সংবাদে এরই মধ্যে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে হাতিয়াবাসী। তারা রোহিঙ্গাদের বর্তমাণ স্থান চট্টগ্রামেও প্রতিবাদ সভা করেছেন। অনলাইন ভিত্তিক বেশ কয়েকটি পেজে হাতিয়ায় স্থানান্তরের প্রতিবাদে জোর প্রচারণা চলাচ্ছে। তাদেরকে হাতিয়ায় স্থানান্তর করা হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। রোহিঙ্গারা নয় বরং হাতিয়া উপজেলার নদীভাঙা লোকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছে, খোলা আকাশের নিচে কিংবা বেড়ীর উপর বসবাসকারী প্রকৃতির সাথে লড়াইকারী নদীভাংগা এই লোকদের ঠেঙ্গারচরে জমি বন্দোবস্ত  দিলে কৃষিক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পুর্ন হয়ে উঠবে।

No comments

Powered by Blogger.