চট্টগ্রামে পেট্রলবোমায় দগ্ধ রনজিতের মৃত্যু by আহমেদ মুসা

আমার স্বামীর কি অপরাধ ছিল। তিনি কোনোদিন রাজনীতি করেননি। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। রাজনীতির ধারে-কাছেও কোনোদিন যাননি। মিছিল-মিটিংয়েও যাননি। তারপরও তাকে কেন নোংরা রাজনীতির পেট্রলবোমায় দগ্ধ হতে হল। এখন আমার সংসারের কি হবে। আমার ছেলেমেয়ের পড়ালেখার দায়-দায়িত্ব কে নেবে। আমার স্বামীকে কেন মারল? আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল মারা যাওয়া রনজিত নাথের স্ত্রী ছবি নাথ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউতে) তার মৃত্যু হয়। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুর ফলে পরিবারটির সামনে শুধুই ঘোর অন্ধকার। রনজিতের বাড়ি হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে। রনজিতের এমন মৃত্যুতে তার স্ত্রী-পুত্রসহ অন্য স্বজনরাও দিশেহারা হয়ে পড়েন। রনজিতের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে মর্গের সামনে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
নিহত রনজিতের বড় বোন রত্না নাথ যুগান্তরকে জানান, আমার ভাইয়ের (রনজিতের) শান্তা নাথ ও প্রান্ত নাথ নামে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তারা প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। রনজিতকে মারার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট মেয়েদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করেছে পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারীরা। আমরা এর বিচার চাই।
নিহত রনজিতের স্ত্রী ছবি নাথ আর্তনাত করতে করতে যুগান্তরকে বলেন, এখন আমার কি হবে। আমার পরিবারের কি হবে। কি হবে আমার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ। স্বামীর ওপর আমার পুরো পরিবার নির্ভর করত। পরিশ্রম করে দিনে যা আয় করে তা দিয়ে চারজনের পরিবার চলে।
বুধবার রাতে হাটহাজারীর চারিয়া মাদ্রাসার সামনে কালভার্টের ওপর পেট্রলবোমায় ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের মাইজভান্ডার এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক সাবের আহমেদ ও রনজিত দগ্ধ হন। সাবের আহমেদ চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরের প্রায় ৪২ শতাংশ পুড়ে গেছে।
পরিবারকে লাখ টাকা অনুদান : রনজিৎ নাথের পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। শুক্রবার দুপুরে নিহতের স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা তুলে দেয়া হয়।
শ্মশানে সমাহিত : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার চমেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে রনজিতের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পোড়া লাশের গন্ধে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ-বাতাশ, শুরু হয় ক্রন্দন রোল। এ সময় আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় করে তার মৃতদেহাবশেষ এক নজর দেখার জন্য। বিকাল ৫টায় সৎকার শেষে তার লাশ পারিবারিক শ্মশানে সমাহিত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.