মেয়র গফুরের ময়নাতদন্তের নথি হাসপাতাল থেকে খোয়া গেছে by আবু সালেহ আকন

রাজশাহীর নওহাটা পৌরমেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফুরের ময়নাতদন্তের কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে খোয়া গেছে ওই কাগজপত্র। ওই কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরেই জানা যাবে আসলে কী ছিল ওই প্রতিবেদনে। এ দিকে গফুরের মৃত্যুর ব্যাপারে তার সর্বশেষ স্ত্রী ডা. মীম বলেছেন, গফুরকে হত্যা করা হয়নি। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে একটি ইনজেকশন দিয়েছেন তিনি। এরপর গফুর মারা যান। পবা থানার ওসি মো: মতিউর রহমান বলেছেন, মীম একেক সময় একেক কথা বলছেন।
গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এক বাসায় মারা যান পবার নওহাটা পৌরমেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফুর (৬০)। ৮ জানুয়ারি গোপনে গফুরের লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। পরিবারের ভাষ্য, ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন মেয়র আব্দুল গফুর। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগও হয় তার। এরপর আর যোগাযোগ না হওয়ায় তারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানান। ১৯ জানুয়ারি মেয়রের প্রথম স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা পারুল বাদি হয়ে পবা থানায় অপহরণ মামলা করেন। মাঝে বিভিন্ন সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে ছেলের মোবাইলে যোগাযোগ করে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ৫০ হাজার টাকা। একই সাথে তার হয়ে চিঠিও পাঠানো হয় পৌরসভায়।
মামলার পর পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে গফুরের প্রেমিকা ডাক্তার জান্নাতুন সালমা মিমকে গ্রেফতার করে। একই সাথে মিমের দুই বোন জান্নাতুন নাঈম এবং জান্নাতুন ফেরদৌসীকেও গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা ও নওগাঁ থেকে গ্রেফতার হন তারা। মিম এবং তার দুই বোনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে গফুর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এক বাসায় মারা গেছেন। ৩ জানুয়ারি তিনি মারা যান। ৪ জানুয়ারি তার লাশের ময়নাতদন্ত হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে। এরপর ৮ জানুয়ারি তার লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, মিম নিজেই ওই লাশটি হাসপাতাল মর্গে এনেছিলেন। হাসপাতালের রেকর্ডে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে শামীমা। গফুরকে ভাই হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের যে ঠিকানাটি মর্গের রেকর্ডে রয়েছে সেটি অস্পষ্ট। শুধু দেয়া আছে হাউজ নম্বর-৩, রোড নম্বর-২, মোহাম্মদপুর। পুলিশ জানায়, মিমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এতে ৩ মার্চ মিমকে সাথে নিয়ে পবা থানা পুলিশ আজিমপুর গোরস্থানে পৌঁছায়। এরপর বিকেল ৩টায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গফুরের লাশ উত্তোলন শুরু হয়। গত ৪ মার্চ লাশের পুনঃময়নাতদন্ত হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে।
আব্দুল গফুরের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার হাবিবুজ্জামান। লাশটি গলিত থাকায় আসলেই তা গফুরের লাশ কিনা তা শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা নেয়া হয়েছে তার ছেলে ফয়সাল আহমেদের শরীর থেকেও। ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা যাবে লাশটি গফুরের কিনা।
এ দিকে এটি হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা শনাক্ত করা এবং আসলেই গফুরকে হত্যা করা হয়ে থাকলে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ আলামত মহাখালী ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হবে।
এ দিকে হাসপাতাল সূত্র বলেছে, গত ৪ জানুয়ারি গফুরের লাশের ময়নাতদন্ত করেন প্রভাষক গোলাম মোখলেছুর রহমান। কিন্তু ওই কাগজপত্র এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার গোলাম মোখলেছুর রহমান বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। এ দিকে ওই ময়নাতদন্তের কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার হাবিবুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, আজ শনিবার যোগাযোগের জন্য।
পবা থানার ওসি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে মিম একেক সময় একেক কথা বলছেন। তিনি মুহূর্তেই কথা পরিবর্তন করছেন। তবে তিনি বারবার যে কথাটি বলছেন তা হলো তিনি গফুরকে হত্যা করেননি। গফুরের সাথে ২০১৪ সালের ২৯ মে তার বিয়ে হয়েছে। এরপর প্রায়ই গফুর তার সাথে থাকতেন। ঘটনার রাতেও মোহাম্মদপুরে তার বোনের বাসায় তারা ছিলেন। ওই দিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে মিম নিজেই গফুরকে একটি ইনজেকশন দেন। এরপর গফুর মারা যান। ঝামেলা এড়াতে গফুরের লাশ ভুয়া তথ্য দিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পবার ওসি বলেন, মিম প্যারা মেডিক্যাল পাস করেছেন। নওগাঁয় তার একটি কিনিক রয়েছে। তিনি এখনো পুলিশ হেফাজতে আছেন। তার দুই বোনকে আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.