খালেদা জিয়ার গ্রেফতারে পিছু হটছে সরকার by নাবিল ফারহান

সরকার বিরোধী আন্দোলনের তীব্রতার শঙ্কা আর আর্ন্তজাতিক মহলের চাপের কারনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল থাকলেও মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে আগামি ৫ এপ্রিল। সরকারের একাধিক মন্ত্রী এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ৪ মার্চ তাকে গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী আদালতে হাজির করা হবে। এখন গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল থাকলেও তা আপাতত কার্যকর হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিএনপি নেত্রী চাইছেন-উনাকে গ্রেফতার করলে জনরোষ থেকে হয়তো বাচা যাবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী একথাও বলেছেন আমার মনে হয় কারাগারই তার উপযুক্ত জায়গা। খালেদা জিয়া নিজেই গ্রেফতার চাইছেন প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া যা চাইবেন তা সরকার পূরন করবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সূত্র বলছে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা সরকারের ছিলো। তাকে কোথায় রাখা হবে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায় থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে তাতে সরকারকে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। গত রাতেই খালেদা জিয়ার সাথে ১৬টি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিদের সাক্ষাত ছিলো সরকারের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সতর্ক বার্তা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। একই সাথে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে যে কোনো ধরনের মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া ভেস্তে যাবে। কারন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে তার মুক্তি ছাড়া বিরোধী কোনো পক্ষই আলোচনায় বসতে রাজি হবে না। ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল রুপ নিতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতো থিঙ্কট্যাংকগুলো স্পষ্ট করে সতর্ক করেছে যে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে পারে।
এছাড়া হরতাল অবরোধ প্রায় দুই মাস সময় পার হওয়ার পরও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের নতুন মাত্রা ভাবনায় ফেলেছে। গত কয়েকদিন যাবত ঢাকায় হঠাৎ করে সহিংস ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সরকারের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে খোদ প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে এখন পরিস্থিতি যেদিকে যাক না কেন সরকারের জন্য তা স্বস্তিদায়ক হবে না। এখন যদি বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হয় তাহলে আন্দোলন তীব্ররুপ নেবে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের পর আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচী ও কৌশল নিয়ে নিয়ে বার্তা দেয়া হয়েছে। অবরোধের সাথে অসহযোগের মতো কর্মসূচীর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার সাথে সাথে সরকারি অফিস আদালতের কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতি সরকারের জন্য সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অপরদিকে যদি খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা না হয় তাহলে তিনি অফিস থেকে এখনকার মতো আন্দোলন সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাবেন। গুলশান অফিস থেকে তিনি সারা দেশের নেতাকর্মীদের নির্দেশান দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার অফিসে তল্লাশী চালিয়ে খালেদা জিয়ার অফিস স্টাফদের বের করে আনতে পারেন। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে সরকার এমন কৌশল নিলে খালেদা জিয়া বন্দী হিসাবে তারা ধরে নেবেন। তার প্রতিক্রিয়াও গ্রেফতারের মতো হবে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে আন্দোলনের ব্যাপারে খালেদা জিয়া অনঢ় অবস্থানে আছেন। গত রাতে ১৬ দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকে তিনি আবারো আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকার যে আরেকটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা মনে করিয়ে দেয়া হয়। একই সাথে বিচার বর্হিভুত হত্যা, হাজার হাজার নেতাকর্মীর গ্রেফতার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচনের ঘোষনা ছাড়া যে দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্টা করা সম্ভব হবে না তাও উল্লেখ করা হয়।
সূত্রগুলো বলছে খালেদা জিয়ার বক্তব্য বিদেশী ক’টনীতিকরা কার্যত সমর্থন করেছেন। সহিংসতার ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকেও নিন্দা করা হয়। সহিংস ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্টতার কিছু তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
নেতাকর্মীদের দৃঢ়মনোবল ও ক’টনীতিকদের তৎপরতার কারনে বিএনপির নেতারা মনে করছেন আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দাবি আদায় করতে সক্ষম হবেন। আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ইতোমধ্যে প্রমান করা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট রয়েছে। আর এই সঙ্কট সমাধানে নতুন নির্বাচনের জন্য আলোচনা শুরু করতে সরকার বাধ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.