এবার অ্যাসিরীয় সভ্যতাও শেষ!

ইরাকে মসুলের পর এবার তিন হাজার বছরের পুরোনো নিমরুদের অ্যাসিরীয় নগরীতে ‘প্রাচীন সভ্যতা’ ধ্বংসের অভিযান শুরু করেছে আইএস। তারা অসুর্বানিপালের রাজপ্রাসাদসহ অ্যাসিরীয় সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী সব নিদর্শন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
পর্যটন ও পুরাকীর্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, আইএস ঐতিহাসিক নগরী নিমরুদে অভিযান চালাচ্ছে এবং ভারি যান দিয়ে অ্যাসিরীয় সভ্যতার সব নিদর্শন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
ইরাকের পুরাকীর্তিবিষয়ক এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর এ ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয় এবং শৈল্পিক সব নিদর্শনগুলো সরিয়ে নিতে বেশ কয়েকটি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, দ্বিতীয় অসুর্বানিপাল প্রাসাদের ফটকে অবস্থিত লামাসু (পাখাসহ ষাঁড়ের মূর্তি) ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে মসুলের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত প্রাসাদটির ঠিক কোন কোন স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে আইএস সদস্যরা মসুলবাসীকে হুশিয়ার করেছিল যে তারা নিমরুদে মূর্তি ধ্বংসে অভিযান চালাবে। প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা দ্বিতীয় অসুর্বানিপাল। তিনি ইরাক, লেভান্ত, নিু মিসর ও তুরস্কের কিছু অংশ নিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৮৮৩ থেকে ৮৫৯ সাল পর্যন্ত শাসন করেন তিনি।
ইরাকের দ্বিতীয় নগরী মসুলের ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে নিমরুদ শহরটি অবস্থিত। খ্রিস্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দজলা নদীর তীরে গড়ে এ শহর। মসুল এখন আইএসের প্রধান ঘাঁটি।
স্টোনি ব্রোক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ আবদুলামির হামদানি বলেন, ‘আমার বলতে খুবই খারাপ লাগছে যে সবাই এটাই আশংকা করছিল। তাদের (আইএস) পরিকল্পনা একাধারে ইরাকের সব ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংস করে দেয়া।’ তিনি বলেন, ‘এরপর তাদের লক্ষ্য হবে হাতরা।’ হাতরা নিনেভা প্রদেশের সুন্দর একটি নগরী। এটি দুই হাজারেরও বেশি বছর আগে গড়ে উঠেছিল এবং এটি বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি নিদর্শন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত। কিন্তু এই সময়ে এটি ঘটছে।’ আইএস তাদের সাম্প্রতিক হামলায় ইরাকের ঐতিহাসিক নিদর্শন বেছে নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে তাদের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভারি সব যন্ত্রপাতি নিয়ে জঙ্গিরা মসুল জাদুঘরের মহামূল্যবান প্রাচীন নিদর্শনগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
ব্যবিলনীয় সভ্যতার অন্যতম নির্দশন নিমরাদে (ব্যবিলনীয় ভাষায় কালাহ) ৭ হাজার বছর আগে লোকের বসবাস শুরু হয়। শহরটিতে প্রায় ৬০ হাজার লোকের বসবাস ছিল। ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড নিমরুদকে বিশ্বের অন্যতম বিপন্ন ঐতিহাসিক স্থানের তালিকাভুক্ত করে।
ইরাকের সাম্প্রতিক ঘটনাকে বহু প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞরা ২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের বামিয়ান বৌদ্ধ মন্দির গুঁড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এএফপি
প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস যুদ্ধাপরাধ : ইউনেস্কো
ইরাকের প্রাচীন অ্যাসিরীয় নগরী নিমরাদে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন ধ্বংসের নিন্দা জানিয়ে ইউনেস্কো প্রধান ইরিনা বোকোভা একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নিমরাদে ঐতিহাসিক সব প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংসের আমি কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আমরা নীরব থাকতে পারি না।
ইরাক সিরিয়ায় স্থল অভিযান চায় -সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল ফয়সাল সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলাকারী মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটকে জিহাদিদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স সৌদ আল ফয়সাল বলেন, স্থলে আইএসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামরিক অভিযানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে সৌদি আরব। সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলায় অংশ নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলাকে সমর্থন দিলেও পদাতিক সৈন্য মোতায়েনের বিষয় তিনি নাকচ করে দেন। ইরাকে ইরানের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার ব্যাপারে সতর্কবাণী করে সৌদি মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ইরান আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তার মাধ্যমে ইরাকের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.