বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড- আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণকে বিবেচনায় নিন

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও নাশকতার যে পথ বেছে নিয়েছে, তার জবাব সরকার যেভাবে দিচ্ছে, সে ব্যাপারে শুরু থেকেই আমরা উদ্বেগ ও তা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছি। আন্দোলন দমনের নামে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা বিরোধী নেতা-কর্মীদের লাশ উদ্ধারের মতো ঘটনাগুলো যে কার্যত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও নজর ও মনোযোগ কেড়েছে। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিয়মিত অধিবেশনে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত এসব হত্যায় সরকার উৎসাহ দিচ্ছে। এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি) বলেছে, সরকারের তরফে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগ দিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ‘গণতন্ত্র’ ও ‘আইনের শাসন’ কার্যকর আছে—এমন একটি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের ভাবমূর্তি খুবই লজ্জাজনক।
এএলআরসির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ত্রুটিপূর্ণ ও ‘সবকিছুই বিজয়ীর জন্য’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ফলে যারা পরাজিত বা বিরোধী পক্ষ, তারা যেমন অস্তিত্বের সংকটে পড়ে, তেমনি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হলে কোনোভাবেই ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এসব পর্যবেক্ষণকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ নিয়ে এ ধরনের ভাবমূর্তির দায় কার? জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে বিশ্ববাসীর সামনে এই ভাবমূর্তির বাংলাদেশ কোনো নাগরিকের কাছে প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশের মানুষ দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করে— এমন গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কার্যকর দেখতে চায়। এসব নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক শক্তির। আমরা আবারও বলি, আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস বন্ধ হোক, আন্দোলন দমনের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক। সরকার ও বিরোধী পক্ষ দেরিতে হলেও শুভবোধের পরিচয় দিক।

No comments

Powered by Blogger.