রাজনীতিতে নতুন মোড় : সরকারে অস্থিরতা by জাকির হোসেন লিটন

হঠাৎ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে । বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে সরকার কোনো পরিকল্পনায় স্থির থাকতে পারছে না। সরকারের ভেতরে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর অস্থিরতা বাড়ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হবে; না গুলশান কার্যালয় থেকে বের করে বাসায় পাঠানো হবে ; না কার্যালয় তল্লাশি করে অন্য সবাইকে বের করে দেয়া হবে তা নিয়ে শেষ মুহুর্তে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা।
বিশেষ করে খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের খবরে রাজধানীসহ দেশজুড়ে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হওয়া, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মনোভাব এবং রাতে খালেদা জিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর ক’টনীতিকদের বৈঠকের খবরে পরিস্থিতি সামাল দেয়া এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
এর আগে খালেদা জিয়ার অনড় অবস্থানের কারনে সরকারের নানা কৌশল বারবার ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাকে কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করার কৌশল নেয় সরকার। সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা মনে করছিলেন, এই পরোয়ানার কারণে খালেদা জিয়া নিজেই ওই অফিস থেকে বের হয়ে আদালতে জামিন চাইতে বাধ্য হবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া কার্যালয় থেকে বের না হওয়ায় সরকারের এ কৌশলও ব্যর্থ হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার সরকার কঠোর অবস্থানে যাবার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তা চূড়ান্ত করতে পারেননি নীতি নির্ধারকরা। বরং পশ্চিমা কূটনীতিকদের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়। পশ্চিমা কূটনীতিকরাও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে সরকারের সবুজ সংকেতে গুলশান কার্যালয়ে যান।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, একদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং অন্যদিকে পরবর্তিত রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারের কট্ররপন্থী নেতা ও মন্ত্রীরা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে চলমান সঙ্কটের সমাধান চান। কিন্তু অপেক্ষাকৃত মধ্যমপন্থী ও সিনিয়ররা মনে করছেন, এর মাধ্যমে আসলে সঙ্কটের চূড়ান্ত সমাধান না হয়ে আরো জটিল হতে পারে।
বিশেষ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুত্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সার্বক্ষণিক নজরদারি সদ্য সফর করে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মনোভাব এবং সারা দেশে সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের প্রস্তুতির খবর সরকারের জন্য খুব সুখের বিষয় নয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দেশটির পররাষ্ট্রনীতি যে আগের মতো চলবে না তার ইঙ্গিত দেন। এছাড়া প্রবল দমন পীড়নের পরও সরকার বিরোধী আন্দোলনের নতুনমাত্রা ভবিষ্যত পথচলা যে কঠিন হবে তা দলের সিনিয়র নেতারা উপলদ্ধি করে কিছুটা পিছু হটার নীতি গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার নাও করা হতে পারে। কারন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর আলোচনার পথ যেমন রুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে তেমনি সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ এবং আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। তাই তারা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পক্ষে নন দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা। তবে আদালতের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করে আদালতে হাজির করে জামিনের পক্ষেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু খালেদা জিয়া জামিনের মাধ্যমে কার্যালয়ে ফেরার নিশ্চয়তা পেলে আদালতে যেতে পারেন বলে তার আইনজীবীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতাল সরকারের জন্য খুব উদ্বেগেরে কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান আন্দোলনে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজেই জাতীয় সংসদে তথ্য দিয়েছেন। আর চলমান অবস্থানে জাতীয় সমস্যা ও দুর্যোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী।
নানা চেষ্টার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এ সঙ্কট কিভাবে নিরসন হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। হঠাৎ করে পরিস্থিতি আবারো অবনতি হওয়ায় সরকারের মন্ত্রীসভায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। ওই বৈঠক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা নাও হতে পারে। তবে সারা দিন তিনি আদালতে না গেলে আজ রাতে অথবা আগামীকাল হয়তো তার কার্যালয়ে তল্লাশি করা হবে। এর মাধ্যমে সেখান থেকে ব্যাক্তিগত কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করা হতে পারে। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে সেখানে নি:সঙ্গ করে রেখে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.