বাক্স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র -সরকারের চৈতন্যোদয় হবে কি

গণতন্ত্রের সঙ্গে বাক্স্বাধীনতার বিষয়টি যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, সেই সত্যটিই অকপটে উচ্চারণ করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হোসাইন। গত বৃহস্পতিবার সংস্থার অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি সহিংসতা বন্ধ করা ও বাক্স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার তাগিদ দিয়েছেন। জেইদ আল হোসাইন বিশ্বের যেসব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন, তাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়া দুঃখজনক। এই তালিকায় বুরুন্ডি, কঙ্গো, মিয়ানমারের মতো দেশ আছে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসন চলে আসছে বা এখনো বহাল আছে। কিন্তু বাংলাদেশের রয়েছে গণতন্ত্রের দীর্ঘ ঐতিহ্য। দুই দশকের বেশি সময় ধরে এখানে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল জনগণের রায় নিয়ে পালা করে দেশ শাসন করে আসছে। তার পরও এ দেশে এই রাজনৈতিক সংকট কেন দেখা গেল? কেন মানবাধিকার পরিস্থিতির এত অবনতি ঘটল?
কমিশনার স্পষ্ট করেই বলেছেন, মানবাধিকারের ওপর আঘাত কেবল মৌলবাদী শক্তির দ্বারা আসেনি, সরকারের দমন-পীড়নেও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দুই মাস ধরে চলমান বিরোধী দলের সহিংস কর্মসূচি যে পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলেছে, এতে সংশয় নেই। এ অবস্থার উত্তরণে জেইদ আল হোসাইন মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং ব্যক্তির বাক্স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলোচনায়ও সহিংসতা বন্ধ এবং সমস্যার শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করার কথা বলেছেন। গণমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের মুখ বন্ধ করার যে প্রয়াস চলছে, তার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো সোয়ারও সহিংসতা বন্ধ ও সংলাপ শুরুর কথা বলেছেন। এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবেও বিরোধী দলকে সহিংসতা বন্ধ করা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এত সব হুঁশিয়ারি ও পরামর্শের পরও সরকারের চৈতন্যোদয় হবে কি?

No comments

Powered by Blogger.