রক্তাক্ত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আম্রবাগানে যখন সন্ধ্যা নেমে আসছে, জেম আলি ও আরো কয়েকজন তাদের গ্রামের বাড়ির মাটির ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। তারা খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করবেন। কারণ বাড়িতে থাকতে তাদের ভয়। যদি র‌্যাব এসে তাদে ধরে নিয়ে যায়। গত জানুয়ারিতে যখন মতিউর রহমান নামে আলির ২৫ বছরের ভাইকে গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তখন থেকেই আলি আর বাড়িতে রাতযাপন করেন না। মতিউরকে শেষবারের মতো দেখা যায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (ব্যার) হাতে আটক অবস্থায়। দুই হাজারেরও অধিক লোকের বসবাস বাজিতপুরে আলির গ্রামের বাড়ি। তিনি বলেন, র‌্যাবের হাতে যে কেউ যেকোনো সময় আটক হতে পারে। আমরা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি এই র‌্যাবকে। শেখ হাসিনা এই বাহিনী দ্বারা বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার দলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে চান।
অরুন দেবনাথ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন এশিয়ার পঞ্চম জনবহুল দেশের বর্তমান সরকার আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া ও তার দলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চান। খালেদা জিয়া গত ১৩ মাস আগের নির্বাচনকে বর্জন করেছিলেন। বর্তমানে তারা একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে দেশটির অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তর দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া এই দেশটি এখন প্রায় ধ্বংসে পথে। রাজনৈতিক এই দ্বন্দ্বের কারণে জঙ্গিবাদের উদ্ভব হওয়াকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক ব্লগার খোদ রাজধানী ঢাকায় নিহত হন।
ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উদ্ভবের আশঙ্কার কারণে দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র ধ্বংস হতে পারে। এমনকি দেশের সেনাবাহিনীও ক্ষমতা দখল করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আর সে ক্ষেত্রে দেশটি গভীর অতলে তলিয়ে যাবে।
চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক সহিংসতায় এক শ’র ও বেশি লোক মারা গেছেন। অবরোধ ও হরতালের কারণে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে আটক অবস্থায়ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বছর বলা হচ্ছে এই বর্তমান সময়কে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া এ দুই নেত্রীর ভূমিকাই প্রধান। এর মধ্যে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সেকুলার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অপর দিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশটির ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি রাজনৈতিক দল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়ংশ আসন পেয়ে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জোট এই নির্বাচন বর্জন করে। ক্ষমতায় এসে আওয়ামী সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলে বিএনপির সাথে জোটভুক্ত জামায়াতে ইসলামী এই বিচারব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের নয় বলে প্রশ্ন তুলে।
‘২০১৪ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার পর থেকে শুরু হয় দুই মেরুর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব’ ফোনে অরুন দেবনাথকে বলেন, বাংলাদেশের ঢাকাভিত্তিক একটি রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন এই দুই রাজনৈতিক মেরুর দুই নেত্রী কেউ কাউকে ছেড়ে দেবেন না। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি বলছে, নেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ গত বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক অন্ধ প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতারা। এ দিকে অবরোধের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। তৈরী পোশাকের কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছেন।
ফিচ রেটিং নামে বিদেশী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ‘থমাস রোকমাকের’ এক ই-মেইলবার্তায় অরুণ দেবনাথকে বলেন, বেশ কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারী ক্রমাগত সঙ্ঘাত-সহিংসতার কারণে তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য অন্যত্র গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
উভয় রাজনৈতিক দলকেই বুঝতে হবে বিষয়টি। তাদের এই ক্রমাগত সঙ্ঘাত অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সেই সাথে দেশের জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে জঙ্গিবাদের বিস্ফোরণ হতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.