দুঃসহ এই দুর্দিনের অবসান হোক by ড. মাহবুব উল্লাহ্

৬ জানুয়ারি থেকে আজকের এই লেখার দিন পর্যন্ত মোট ৪১ দিনে অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা ও ক্রসফায়ারে মৃত্যুর পরিসংখ্যান একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায় পেট্রলবোমা ও আগুনে নিহতের সংখ্যা ৫২, সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ১৩ এবং অন্যান্য কারণে নিহতের সংখ্যা ২২। অর্থাৎ রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষে মোট নিহতের সংখ্যা ৮৭। এছাড়া ক্রসফায়ারে আরও নিহত হয়েছেন ১৯ জন। যানবাহনে আগুন ও ভাংচুরের সংখ্যা ১১০১, রেলে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ১২টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ১২৬ জন, এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ৬২ জন। ঢাকার বাইরে কয়েকটি হাসপাতালেও অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কারারুদ্ধ হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি। দেশে যখন কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ থাকে না তখনও বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হয় অথবা মানুষ বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনাও মর্মান্তিক। কিন্তু এসবের জন্য কেউ কাউকে দোষারোপ করে না। একান্তই যদি দোষারোপ করতে হয় তাহলে দোষারোপটি গিয়ে বর্তায় নিয়তির ওপর। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছাড়াও দুর্বৃত্তদের হামলায় কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বন্দ্বেও অনেককে মৃত্যুবরণ করতে হয়। এসব ঘটনাকে মানুষ জীবনযাপনের ঝুঁকি হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু দেশের দায়িত্ব যাদের হাতে আছে অথবা ভবিষ্যতে যাদের হাতে ন্যস্ত হবে তাদের মধ্যকার বিরোধের কারণে যদি এত রক্তপাত হয়, এত মানুষের প্রাণহানি হয় এবং এতগুলো মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যায় তাহলে তা কোনোক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। এর জন্য নিজেকে প্রবোধ দেয়ার মতো কোনো যুক্তিও খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন বা ভবিষ্যতে করবেন তাদের ওপরই ন্যস্ত থাকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে যদি তারা শৈথিল্য প্রদর্শন করে কিংবা আনাড়িপনার পরিচয় দেয় তাহলে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবেন বিলক্ষণ। রাষ্ট্রকে অনেক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রও বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রযন্ত্রের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, কারাগার ও বিচার ব্যবস্থা। সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এগুলোকে রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। কল্যাণকামী রাষ্ট্রে নিপীড়নের এ হাতিয়ারগুলোকে জনকল্যাণবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়। আবার প্রায়ই দেখা যায়, রাষ্ট্র নিজেই নিপীড়কের পক্ষে দাঁড়ায়, তখন নিপীড়ন যন্ত্রগুলো ব্যবহৃত হয় শোষিত, নিপীড়িত ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের বিরুদ্ধে। তখন জনগণের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা। মার্কসের ভাষায়, রাষ্ট্র হল Instrument of class tyranny। এ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে রাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট একটি শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে। এ স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্র বিপরীত শ্রেণীর মানুষকে অস্ত্রের বলে অবদমিত করে। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের এ হিংস্র ও উলঙ্গ রূপটি অনেকাংশেই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। একটি আধুনিক রাষ্ট্র যদিও শেষ বিচারে সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকারী, তদসত্ত্বেও রাষ্ট্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগে বহুলাংশে সংযম ও শালীনতা রক্ষা করার চেষ্টা করে। আধুনিক রাষ্ট্র আইনের চোখে সবার মধ্যে একটি সমতা রক্ষার প্রয়াস পায়। আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে এ ধরনের রাষ্ট্র এমন কিছু করে না যাতে নগ্নভাবে প্রতীয়মান হয়, রাষ্ট্র পক্ষপাতিত্ব করছে। শোষক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্রকে সর্বদা পুলিশি শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে এমনটি নয়। রাষ্ট্র মতাদর্শ, গণমাধ্যম ও মূল্যবোধকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে তার ক্রিয়াকর্মের পক্ষে জনমনে সম্মতি সৃষ্টি করতে পারে। যে রাষ্ট্র এ ধরনের ভদ্র পদ্ধতির আশ্রয় নেয় এবং নগ্ন বল প্রয়োগের পদ্ধতি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে সে রাষ্ট্রকে আমরা সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করি। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্র অত্যন্ত সফল ও সুন্দরভাবে কায়েমি স্বার্থবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হয়। অনেক সময় দেখা যায়, কায়েমি স্বার্থবাদীরা বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের ভূমিকা হল বিবদমান ব্লকগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা। এ রকম ক্ষেত্রে রাষ্ট্র অনেকটা অটোনোমাস চরিত্র ধারণ করে। এটাকে তাত্ত্বিকরা Relative Autonomy of State হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
উপযুক্ত বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সত্যিকার অর্থে একটি পরিণত বা ম্যাচিউর রাষ্ট্রের চরিত্র ধারণ করতে পারেনি। এটা আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের একটি বড় রকমের ব্যর্থতা। অধিকাংশ সময়ে তারা তাদের আশু স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের কথা ভাবেননি। ফলে তারা রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেলেও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করতে পারেননি। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ আপাতভাবে যে অমীমাংসেয় দ্বন্দ্বের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা একটু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বা সহনশীল হলে খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব ছিল। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আজ রাষ্ট্রক্ষমতা যাদের হাতে তারা সমস্যার সমাধান চান না। বরং এ সমস্যা প্রলম্বিত হলে তাদের ধারণানুযায়ী রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর তাদের কর্তৃত্ব এমনই নিরংকুশ হবে যে, তারা ২০২১ সাল কিংবা ২০৪১ সাল পর্যন্ত এদেশের দণ্ডমুণ্ডের অধীশ্বর হয়ে থাকবেন। অনেকেই মনে করেন বিবদমান দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রেণীর স্বার্থগত পার্থক্য নেই। কাজেই তাদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্বও কল্পনা করা যায় না। উভয় দলই ব্যক্তি পুঁজিবাদে বিশ্বাসী। উভয় দলের আর্থ-সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে বিশাল যোজন কোনো পার্থক্য নেই। উভয় দলের তুলনাকারীরা আরও বলেন, যে ধনিকগোষ্ঠীর স্বার্থের তারা প্রতিনিধিত্ব করেন সেই শ্রেণীটির উদ্ভব ঘটেছে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে। অবশ্য সময়ের প্রবাহে দুর্বৃত্ত পুঁজির একটি অংশ উৎপাদনের বলয়েও প্রবেশ করেছে। এতদসত্ত্বেও দুর্বৃত্তায়নের পথে পুঁজি আহরণের প্রয়াসও অব্যাহত আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে গত ৪৩ বছরে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে যে পরিমাণ পুঁজি আহরিত হয়েছে তার সিংহভাগ যদি উৎপাদনের বলয়ে প্রবেশ করত, তাহলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের বস্তুগত ভিত্তি অনেকাংশেই হীন ও দুর্বল হয়ে পড়ত। উৎপাদনের পরিমণ্ডলে পুঁজি যখন প্রবেশ করে তখন নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলার একটি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়। এসব বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রের। দৃষ্টান্তস্বরূপ আমেরিকার Food and drug administration-এর কথা বলা যায়। আমেরিকায় যেসব ব্যবসায়িক কর্পোরেশন খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের কাজে নিয়োজিত তাদের ওপর Food and drug administration নিরপেক্ষতার সঙ্গে কঠোর নজরদারি বজায় রাখে। ফলে এ ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায় না। এ কথা সত্য যে, তারাও বেশ কিছু কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করে। কিন্তু সেসব কারসাজির ঘটনা তারা আমেরিকায় না ঘটিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দুর্বল দেশগুলোতে ঘটায়।
আলোচনার এ পর্যায়ে পাঠকের কাছে নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়েছে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অপূর্ণতাই আমাদের রাজনৈতিক সংকটের আসল কারণ। বিখ্যাত মার্কিন পণ্ডিত ব্যারিংটন মুর বলেছিলেন, ‘বুর্জোয়া না থাকলে গণতন্ত্রও থাকে না।’ আমাদের দেশে সুঠাম বুর্জোয়া শ্রেণী না থাকার ফলে সত্যিকার গণতন্ত্রও আমরা পাচ্ছি না। দুর্বৃত্ত পুঁজি মূলত সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে স্ফীত হয়। এদেশে যখন একটি দলের সরকার আসে তখন অন্য দলের দুর্বৃত্তরা সমূলে বঞ্চিত হয়। এ কারণে ক্ষমতা হারানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই যেনতেন ধরনের ক্ষমতা ধরে রাখার একটি প্রবণতা আমরা বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করেছি। এজন্যই সুধীজনরা বলে থাকেন, winners take all- এ পরিস্থিতিতে বিরোধী পক্ষকে কোনো রকম ছাড় দিতে চরম অনীহা লক্ষ্য করা যায়। দেশের বিদ্যমান সংকটের সূচনা হয়েছিল গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এ সংখ্যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কিছু বেশি। বাকি ১৪৬টি আসনে কার্যত তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। কারও কারও মতে, পাঁচ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দেয়নি। অবশ্য চারদিন পর নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। রাজধানী ঢাকায় নির্বাচনবিরোধী তেমন কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। তদসত্ত্বেও ঢাকাবাসীদের ক’জন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে সেটা ঢাকাবাসী নিজেরাই জানেন। এ রকম একটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হওয়ার এক বছর কার্যত কোনো রকম সংঘাত-সংঘর্ষ ছাড়াই কেটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বলেছিলেন, নিয়ম রক্ষার নির্বাচন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নির্বাচন। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের জন্য আলাপ-আলোচনা করা হবে। কিন্তু ১ বছরের মধ্যেও সে আলোচনাটি হল না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। বহির্বিশ্বেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা হয়েছে। এক বছর পর যখন ২০১৫-এর ৫ জানুয়ারি সমাগত হল তখন বিএনপি ও তার জোট চাইল দিবসটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে। অন্যদিকে সরকারি জোট চাইল গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করতে। এটা নিয়েও একটা আপসরফা হতে পারত। কেউ একদিন আগে আবার কেউ একদিন পরে নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করতে পারত। কিন্তু সরকার ৩ তারিখ থেকেই সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরুদ্ধ করে দিল। সরকারের পক্ষে অবরোধ করা খুব সহজ। কারণ প্রশাসন যন্ত্র তাদের হাতে, এর আগে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০-৭ দফা দাবিনামা পেশ করেছিলেন। দাবিগুলো ছিল মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক। সংকটের আরও গূঢ় কারণ হল সংবিধান থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপকরণ। পরিতাপের বিষয় হল, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করার প্রয়াস ছিল। এটাও সমর্থনযোগ্য নয়। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ২টি বড় দলের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে। আজ তাই পারস্পরিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রটি তৈরি করাই সবচেয়ে বড় কাজ। অতি সম্প্রতি কিছু বিশিষ্ট নাগরিক রাজনৈতিক সমঝোতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। ব্যক্তি হিসেবে তারা হয়তো সবাই ফেরেশতাতুল্য নন। মানুষ মাত্রেরই সীমাবদ্ধতা থাকে। ভুল-ত্রুটিও থাকে। তবুও দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে তারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে হতোদ্যম হবেন না এটাই আশা রাখি। রবার্ট ব্রুস যেভাবে মাকড়সার পুনঃপুন প্রচেষ্টা দেখে উৎসাহবোধ করেছিলেন, তাদেরও সে রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তারা নিশ্চয়ই জানেন এবং বোঝেন, বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নে ভারতের একটি অব্যক্ত উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে ভারতের ৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার এবং সমপরিমাণ অনানুষ্ঠানিক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া এ অস্থিতিশীলতার উত্তাপ দেশের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে আজ হোক, কাল হোক ভারত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার পক্ষে নিজ স্বার্থেই ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কও গঠনমূলক রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। এ বিবেচনায়ও উদ্যোগ গ্রহণকারী নাগরিকরা অনুকূল পরিবেশ পাবেন। সর্বোপরি দেশের আমজনতা শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। এটাই হল প্রধান নিয়ামক। উদ্যোগ গ্রহণকারী নাগরিকরা তাদের পরিসর বৃদ্ধি করে কাজ চালিয়ে যাবেন এমনটাই অধিকাংশ মানুষের আকাক্সক্ষা। আশা করি সাধারণ মানুষের এ আকাক্সক্ষা বিফলে যাবে না। গত ৪১ দিনের ঘটনা যেন একটি সাময়িক দুঃস্বপ্ন হিসেবেই থেকে যায়, এটাই হোক কাম্য।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.