বার্ন ইউনিটে ৯ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পেট্রলবোমায় দগ্ধ এবড়োথেবড়ো শরীর নিয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ৫০ জন। তারা একটু উপশমের জন্য হা-হুতাশ করছেন। চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ৯ জন। অপরদিকে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন আরও কমপক্ষে ২৩ জন। যাদের শরীর ১৫ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। বুধবার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, পেট্রলবোমায় দগ্ধ রোগীদের স্বজনরা দৌড়-ঝাঁপ করছেন। ওয়ার্ড কিংবা ইউনিটে জায়গা না হওয়ায় এখনও বারান্দায় কাতরাচ্ছেন ৮ জন দগ্ধ রোগী। এইচডিইউ ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ১১ জন, যারা এখনও শংকামুক্ত নয়। ৫৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসেন মিয়া আইসিইউতে বিলাপ করছেন। পেট্রলবোমায় তার শরীর পুড়ে গেছে ৭৫ শতাংশ। ছাগল বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। ১৫ ফেব্র“য়ারি নরসিংদী এলাকায় কাভার্ড ভ্যানে ছোড়া পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী নূরজাহান বেগম (৫০) স্বামীর কষ্টে থরথর করে কাঁপছেন। ডাক্তার, নার্সরা বেডের পাশে গেলেই জড়িয়ে ধরে বলছেন, তার স্বামীকে যেন যে করেই হউক সুস্থ করে তোলা হয়।
নূরজাহান বেগম জানান, তারা খুবই দরিদ্র। ফেনী নদী ভাঙন এলাকার মানুষ। জায়গা জমি যা ছিল তা নদীই গিলে খেয়েছে। এখন কোনো মতে টিনের একটি ঘর করে ২ ছেলে ও ৪ মেয়েকে নিয়ে থাকছেন খেয়ে না খেয়ে। তার স্বামীই সংসার চালাতেন। সৎ উপার্জনে পরিবার নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে ছিলেন। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। পেট্রলবোমা তার স্বামীর দাড়ি, মাথার চুল সব ছাই করে দিয়েছে।
এদিকে পর্যাপ্ত আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট না থাকায় চিকিৎসা প্রদানে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এমনটা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। বার্ন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম যুগান্তরকে জানান, ৪-৫ দিন আগেও এ বার্ন ইউনিটে ৬৪ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি ছিল। ১৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠায় তাদের মধ্যে ৬ জনকে কুর্মিটোলা ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সুস্থ রয়েছে। বাকিরা বাসায় চলে গেছেন। তিনি বলেন বেশি দগ্ধ রোগীদের যথাযথ চিকিৎসায় ২টি ওয়ার্ডকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় দুটি এইচডিইউ ইউনিট করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠান প্রমিক্স কোং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৌসুমি ইসলাম জানান, আইএফআইসি ব্যাংকের অর্থায়নে তারা দুটি ওর্য়াডকে এইচডিইউ ইউনিট সমপরিমাণের করে তৈরি করে দিচ্ছেন। যে ইউনিট দুটিতে ৩৬টি সয়ংক্রিয় পদ্ধতির বেড স্থাপন করা হবে। গত সপ্তাহে কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী আড়াই মাসের মধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন হবে।
প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সাজ্জাদ খোন্দকার যুগান্তরকে জানান, দুটি ওয়ার্ড এইচডিইউ ইউনিটে রূপান্তরিত হলে চিকিৎসা সেবায় তাদের সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, দগ্ধ রোগীদের অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে এখনও ৯ জন চরম শংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তিনি বলেন, সুস্থ হয়ে উঠা ৭ জনকে কুর্মিটোলা ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.