সাতক্ষীরার কুলচাষিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই

(সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর কুলের বাজারে প্রচুর কুল উঠলেও ক্রেতা নেই। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো) সাতক্ষীরা যে সাত কারণে বিখ্যাত, তার একটি হলো কুল। সেই কুল নিয়েই চাষিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হরতাল-অবরোধের কারণে উৎপাদিত কুল দেশের অন্য কোথাও পাঠানো যাচ্ছে না। এতে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সূত্র জানায়, কুল, ওল, আম, ঘোল, সন্দেশ, মাদুর ও গাছের কলম সাতক্ষীরার নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। জেলায় নয় শতাধিক কুল বাগানে ৩ হাজার ৬৩৮ বিঘা জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। এসব বাগানে প্রায় ৩ হাজার ১২২ মেট্রিক টন কুল উৎপাদিত হয়। কয়েকজন কুলচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি কুলগাছে ফুল আসে। অক্টোবর মাসে মালিকদের আগাম টাকা দিয়ে কুলের বাগান কেনেন চাষিরা। তারপর পরিচর্যা শুরু করেন। জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে কুল পেড়ে বিক্রি শুরু হয়। এ সময় বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় এসব কুল।
চাষিরা বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাউকুল প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। একইভাবে নারকেলি কুল ৭০-৮০ টাকা থেকে কমে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আপেল কুলও একই দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে সাতটি কুলের বাগান কিনেছিলেন। বাগান কেনার পর পরিচর্যা করতে খরচ হয়েছে আরও পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু অবরোধ ও হরতালের কারণে তিনি উৎপাদিত কুল বিক্রি করতে পারছেন না। বর্তমানে কুলের চাহিদা কম থাকায় স্থানীয় বাজারে কুলের দাম অনেক কমে গেছে। বিক্রি করতে না পারায় অনেক সময় কুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তালা উপজেলার আসারত রহমান বলেন, তিনি ছয় বিঘার কুলের বাগান কিনেছিলেন দুই লাখ টাকায়। পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে তিন লাখ টাকা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই বাগান থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার কুল বিক্রি হতো। এখন এক লাখ টাকার কুলও বিক্রি হবে না। আর মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
সদর উপজেলার কুলচাষি আবদুল মান্নান, পুরাতন সাতক্ষীরার আব্বাস মীর, কলারোয়ার আবদুল হামিদ, রবিউল ইসলাম, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই একই ধরনের কথা বলেন।
গত সোমবার সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর কুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ মণ কুল পড়ে আছে; কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। আড়তদার শাওন এন্টারপ্রাইজের মালিক ফজর আলী ও বিনা ফল ভান্ডারের মালিক নূরুল আমিন বলেন, তাঁরা মৌসুমে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মণ কুল বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতেন। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে কুল বাইরে পাঠাতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে কিছু কুল বাইরে পাঠালেও ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ লাগছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপপরিচালক এম গফুর বলেন, জেলার কয়েক হাজার চাষি কুল চাষের ওপর নির্ভরশীল। চলতি মৌসুমে কুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু অবরোধ-হরতালে কুল সাতক্ষীরার বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.