বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা- শিক্ষার্থীদের আর কত সর্বনাশ করবেন?

লাগাতার হরতাল-অবরোধে শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বত্র পাঠদান বিঘি্নত। ২০ দলীয় জোটের 'আন্দোলন' যতই ঢিলেঢালা ও অকার্যকর এবং নির্বিষ হোক না কেন, অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পান। এই ভয়ের কথা আন্দোলনের কৌশল প্রণেতারা ভালো করেই জানেন। আর সে কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের করিডোরে কিংবা কার্জন হলের প্রাঙ্গণে বোমা ফাটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন কেঁপে ওঠে বোমা ফাটার শব্দে। আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যে দেশের ছাত্রছাত্রীরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়েছে, যারা স্বাধীনতার মন্ত্রে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেছে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাভূত করার জন্য বাংলার সবুজ জমিনকে লাল করেছে বুকের রক্তে, সেই অকুতোভয় প্রজন্মের উত্তরসূরিদের এখন শ্রেণীকক্ষ থেকে জোর করে বের করে আনার জন্য বোমাবাজির আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এ কেমন আন্দোলন? ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয় না বলে তাদের বোমার ভয় দেখিয়ে ঘরে আবদ্ধ রাখতে হবে? কাদের স্বার্থেই-বা এ আন্দোলন? একের পর এক পরীক্ষায় জট সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের দেড় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ভালো করে ক্লাসই শুরু করা গেল না। পরীক্ষার শুরু থেকেই হোঁচট খেয়ে চলেছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রায় ১৫ লাখ কিশোর-কিশোরীর এ পরীক্ষা কবে শেষ হবে, কেউ বলতে পারে না। দুই সপ্তাহে মাত্র চারটি পরীক্ষা অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় লাখ লাখ পরিবার। 'আন্দোলনকারীদের' অনেক পরিবারেও রয়েছে পরীক্ষার্থী। ২০ দলীয় জোট বলছে, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এ কেমন আহ্বান? নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গের এ আয়োজন কেন? সরকার পতনের আন্দোলনের নামে আপনারা কাদের শাস্তি দিচ্ছেন? নগরে আগুন লাগলে দেবালয় রক্ষা পায় না_ এটা তো বহু বহু আগে মনীষীরা বলে গেছেন। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। সেখানে নিশ্চয়ই অনেক প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি রয়েছেন। তারা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে আর বিলম্ব করবেন না, এটাই প্রত্যাশা।
আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রায় ১২ লাখ ছাত্রছাত্রী এতে অংশ নেবেন। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতার কারণে তারা পড়াশেনায় মন বসাতে পারছেন না। নির্ভয়ে ক্লাসে বা কোচিংয়ে যেতে পারছেন না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ লাখ শিক্ষার্থীর সব ধরনের পরীক্ষা আটকে গেছে। এর ক্ষতিপূরণ কীভাবে সম্ভব? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক উদ্যোগে শিক্ষা পঞ্জিকা অনুসরণ হচ্ছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ সময়মতো হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সেশনজট সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসছিল। কেন তাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলো? গত রোববার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। অপর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হরতাল-অবরোধে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন একই আদালত। এ ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব দূর করা না গেলে এ আদেশ প্রতিপালন সহজ হবে না। আমরা আশা করব, শুভবুদ্ধির জয় হবে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের সন্তানকে জিম্মি করবেন না।

No comments

Powered by Blogger.