চট্টগ্রামে সুন্দরীর ফাঁদে প্রতারক দুবাই মিজান by মহিউদ্দীন জুয়েল

প্রতারক মিজানকে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন ইউসুফ। নিজের জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছায় শেষ সম্বল তুলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কে জানতো প্রতারক মিজান সেই টাকা নিয়ে চম্পট দেবে সবার অগোচরে। একজন, দু’জন নয়। পরে খবর নিয়ে জানলেন সেই প্রতারক এভাবে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে প্রায় ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনেক মানুষের কাছ থেকে। অসহায় ইউসুফের মতো বিদেশগামী লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে মিজানকে। শেষমেষ তারা জানতে পারলেন মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা আছে তার। তাকে ধরতে সবাই মিলে ফন্দি আঁটেন। এক পর্যায়ে এক মেয়েকে দিয়ে প্রেমের অভিনয় করিয়ে হাতেনাতে আটক করা হয় সেই প্রতারককে। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় গেলে এক প্রতারকের বিষয়ে পাওয়া গেল এমনি তথ্য। পুলিশের হাতে আটক হওয়া এই ব্যক্তির পুরো নাম মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (২৫)। তার গ্রামের বাড়ি মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে। পিতার নাম আবদুল মালেক। এ ঘটনায় মিজানকে জিম্মি করে আটক করার ঘটনায় সাইফুল নামের আরেক ব্যক্তিকেও ধরা হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন, মিজানকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হওয়ায় তাকে সবাই মিলে অপহরণ করেছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিজানের প্রতারণা করার নানা কাহিনী উঠে আসে। মিজান বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে নানা সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কখনও সে দেশের বাইরে, আবার কখনও বিদেশে বসে এসব কাজ করতো। বিদেশ গিয়ে লোকজন নিঃস্ব হয়ে ফিরে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সে পালিয়ে যেতো। সর্বশেষ মিজানকে টাকা দিয়ে পথে বসেন ১১ ব্যক্তি। গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে এসব ব্যক্তির কথা হয়। আলাপে তারা জানান, প্রতারিত ইউসুফের পরিচিত সুন্দরী এক আত্মীয়কে দিয়ে মিজানকে ধরতে ফাঁদ পাতা হয়। বারবার যোগাযোগ করার পরও যখন সে সাড়া দিচ্ছিল না, তখন ওই মেয়ে একদিন ফোন করে তাকে। এরপর এক মাস, দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রেমে পড়ার কথা জানায় মেয়েটি। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে মিজানও। শেষমেষ সিদ্ধান্ত হয়, সে ওই মেয়েটির সঙ্গে দেখা করবে সামনাসামনি। মেয়েটি তাকে গত ২৩শে ডিসেম্বর ঢাকায় আসতে বলে। সে গুলশানে যাওয়ার পর প্রতারিতরা সবাই মিলে তাকে ধরে ফেলে। এরপর তাকে ফেনীতে নিয়ে যায়। মিজানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে সে তার এক আত্মীয়কে টাকা নিয়ে আসতে বলে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন জানার পর তারা ক্ষুব্ধ প্রতারিত লোকজনের সঙ্গে কৌশলে যোগাযোগ করে মিজানকে উদ্ধার করে তাকেও আটক করে। এ ঘটনায় প্রতারিত হওয়া সাইফুল নামের অপর ব্যক্তিকেও ধরা হয়। তবে তিনি মিজানকে আটক করার জন্য এ ঘটনা সাজিয়েছেন বলে দাবি করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতারিত সাইফুল বলেন, আমি দুই লাখ টাকার বেশি জমা দিয়েছি তার কাছে। কিন্তু ভ- মিজান দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আরও ১০ জনের কাছ থেকে প্রায় ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাকে ঢাকা থেকে অপহরণ করে সবাই ফেনীতে নিয়ে আসি। আদালতে যা সত্য তাই বলবো। আমরা টাকা ফেরত চাই। প্রতারিতদের আরেকজন মানবজমিনকে জানান, মিজানকে বাঁচাতে কৌশলে কাজ করছে পুলিশ। তাকে খুব কষ্ট করে ধরা হয়েছে। যখনই তাকে ফোন করা হতো তখনি সে বলতো আজ ঢাকা, কাল চট্টগ্রাম। বহুদিন পর তাকে হাতেনাতে ধরতে পেরেছি। বাকলিয়া থানা পুলিশ জানায়, খবরটি শোনার পর তারা প্রতারক মিজানকে আটক করেন। প্রতারণার আগে একসময় সে দুবাইয়ে ছিল। মিজান ভিসা জাল করতে ওস্তাদ। ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলেই সে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা জাল করতে পারে।  মূলত ইউসুফ নামের এক ব্যক্তির আত্মীয়াকে দিয়েই মিজানকে ধরা হয়। কথাবার্তায় ওই মেয়ে চালাক হওয়ায় সবাই তাকে দিয়েই প্রতারককে ধরতে ফাঁদ পাতে। অবশেষে মিজান সেই ফাঁদে পা দিয়ে ঢাকায় প্রতারিতদের হাতে ধরা পড়ে। থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, মিজানকে আটক করার পরপরই প্রতারিতরা দ্রুত ঢাকা থেকে পরদিন ফেনীতে নিয়ে আসে। এরপর সেখানকার মায়া ক্লিনিকে আটকে রাখে। পরে প্রতারিতরা মিজানের খালাতো ভাই বেলালের ফোনে জানান, তার ভাই অনেক টাকা মেরে দিয়েছে। তাই টাকা ফেরত না দিলে তাকে জানে মেরে ফেলা হবে। এ কথা শোনার পর বিষয়টি সে পুলিশকে জানালে তারা গিয়ে উদ্ধার করেন তাকে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান।

No comments

Powered by Blogger.