দেশজুড়ে ধরপাকড়

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। রাজধানীর বকশীবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শুরু হয় এ অভিযান। ২৪শে ডিসেম্বর দুপুর থেকে ২৭শে ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীকে। ঢাকা মহানগর, গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার অর্ধশত গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাসায় চালানো হয়েছে তল্লাশি। পাশাপাশি বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনা, বগুড়া ও টঙ্গীতে। গাজীপুরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে করা কটূক্তির জন্য ক্ষমা না চাইলে গাজীপুরের মতো আগামীতে খালেদা জিয়া দেশের অন্য কোথাও সমাবেশ করতে পারবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। ৫ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উদযাপন ও ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে যৌথসভা শেষে দেয়া বক্তব্যে এ ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, কটূক্তি ও ইতিহাস বিকৃতির জন্য ক্ষমা না চাইলে জনগণ গাজীপুরের মতো আগামীতে দেশের অন্য কোথাও খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দেবে কিনা- তা ভাবার সময় এসেছে। এদিকে বকশীবাজারে সংঘর্ষ ও এমপির গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয়সহ স্থানীয় দুইশতাধিক নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ ও চকবাজার থানায় দায়ের করা হয়েছে দু’টি মামলা। হরতাল চলাকালে সাংবাদিকদের বহনকারী মাইক্রোবাস ভাঙচুরের অভিযোগে গতকাল গাজীপুরে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলায় আসামি করা হয়েছে গাজীপুর সিটি কপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান ও জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ ৭৫ নেতাকর্মীকে। ওদিকে শুক্রবার ভোরে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে তার এক বন্ধুর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। বকশীবাজারের ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, হামলা, পুলিশের কাজে বাধাদান ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তার ধানমন্ডির বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। এছাড়াও সেখান থেকে তুরাগ থানা বিএনপির সভাপতিসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে বুধবার বকশীবাজারে সংঘর্ষের পর ঢাকা মেডিকেল এলাকা ও চকবাজার থেকে অন্তত ১৫ জন বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সহিংসতার আশঙ্কায় ওই রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে বুধবার গাজীপুরে জনসভাস্থল থেকে মঞ্চ তৈরির জিনিসপত্র সহ ৬ জন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে মানিকগঞ্জের ৬ উপজেলায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির ১৭ কর্মীকে। বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান আহম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরণসহ ৪ জনকে। একই ভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত গাজীপুরে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৪৪ ধারা জারির পর শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক নাজমুল খন্দকার সুমনের পিতা হোটেল ব্যবসায়ী খন্দকার আবুল হোসেনসহ চারজনকে। এদিকে সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির তিন নেতাকে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন যশোর নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আলী আজগর, নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জাবেদ হোসেন ও যশোর সদরের নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবু সাইদ। নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগে শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আসিফ বিন রানাকে। গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় বরিশালে বিএনপির তিন কর্মীকে। এছাড়া রাজধানীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, পল্লবী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, শ্যামপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, রূপনগর থানা বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার ও শ্রমিক দলের গাজীপুর জেলা সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, গাজীপুরের জেলা বিএনপির সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম ম-ল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন তালুকদার, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকলেসুর রহমান, সদর থানা বিএনপির নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন চৌধুরী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানভীর আহমেদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়েছে। এদিকে সমাবেশে ছাত্রলীগের প্রতিবন্ধকতা ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে শনিবার গাজীপুরে সকাল-সকাল সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। এদিকে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার পর শুক্রবার রাতেই দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয় গাজীপুরের টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়। এদিকে শুক্রবার রাতে বগুড়া বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ভবনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারসহ ৬০ বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। ওদিকে রাজশাহী মহানগরে শুক্রবার রাতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় মহানগরের মতিহার থানা বিএনপির সভাপতি আনসার আলীসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.