‘রাতে উদ্ধার হলে আমার ছেলেকে জীবিত পেতাম’ -জিহাদের বাবা নাসিরউদ্দিন

রাতের মধ্যে উদ্ধার করলে শিশু জিহাদকে জীবিত পাওয়া যেত বলে দাবি করেছেন তার পিতা নাসিরুদ্দিন। তিনি বলেন, মাঠে খেলা করা বাচ্চারা পাম্পে কাজ করা লোকজনকে জিহাদের পাইপে পড়ার খবর দিলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় শাহজাহানপুর স্টাফ কোয়ার্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় শিশু জিহাদ পাইপে পড়ে যাওয়ার পর থানায় আটকে রেখে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ছেলে জিহাদ পড়ে যাওয়ার পর যখন উদ্ধার তৎপরতা চলছিল তখন তিনি মাঠে বসেছিলেন। এসময় পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে বলে। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, থানায় নিয়ে ১৫ মিনিট পর দিয়ে যাবে। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ তাকে বলে ওখানে গেলে সাংবাদিকরা বিরক্ত করবে। পেছনে রুম, তুমি ওখানে গিয়ে ঘুমাও। পরে সেখানে বসিয়ে রাখে। সকালে (গতকাল) ছাড়ার কথা বললে আবারও বলে ওখানে গেলে সাংবাদিকরা বিরক্ত করবে। এর কিছুক্ষণ পর লোকজন গেলে পুলিশ বলে- বড় স্যার আসবে, তিনি কথা বলে ছেড়ে দেবেন। এরপর সকাল ৯টার দিকে এক দারোগা গিয়ে তাকে বলেন, তুমি সত্যি কথা বলো। এ সময় দারোগা তাকে বলেন দেখো, তোমার বাচ্চা কিন্তু ওটার ভিতরে পড়েনি। এর জবাবে নাসিরুদ্দিন বলেন, না স্যার ওখানে যে সব বাচ্চা খেলা করছিল তারা আমাকে বলেছে জিহাদ পড়ে গিয়েছে। ওটার ভিতরে ছাড়া আমার বাচ্চা কোথাও নেই। তখন ওই কর্মকর্তা বলেন, ওখানে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সেখানে কি আছে সব দেখা গেছে। ওখানে তোমার বাচ্চা নাই। তখন জিহাদের বাবা ‘বাচ্চা কোথায় গেছে’ জিজ্ঞেস করলে দারোগা বলেন, দেখ তোমার বাচ্চাকে কেউ কিডন্যাপ করছে। তোমার সঙ্গে হয়তো কারও শত্রুতা আছে। নাসির উদ্দিন বলেন, কারও সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই। তখন ওই পুলিশ সদস্য বলেন, ভাল করে মনে করে দেখো। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গেছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখো। কেউ কিডন্যাপ করছে কিনা দেখো, আর যদি তুমি লুকিয়ে রাখো সেটাও বলো। নিজের বাচ্চা কি লুকিয়ে রাখা সম্ভব? জিহাদের পিতার এমন প্রশ্নে তিনি তাকে বলেন, তুমি আমার ছোট ভাই, ভালভাবে বলছি, সত্য কথা বলো, তা নাহলে র‌্যাব যদি আসে তবে তারা অন্যভাবে জিজ্ঞাসা করবে। সে সময় তো ঠিকই বলবা। আমার কাছে বলে দাও, তাইলে তোমারই ভাল হবে। ছেলেকে কোথাও লুকাননি এ কথায় অনড় থাকলে দারোগা চলে যান। এরপর আধাঘণ্টা পর এসপি তাকে ডেকে নিয়ে ঘটনা জানতে চান। তিনি সব কিছু বললে ওই এসপি তা লেখেন। এ সময় পাশের রুমে ছিল ওই তিনটি বাচ্চা। যারা প্রথমে ঘটনা দেখেছিল। এ সময় প্রথমে ছোট মেয়েটিকে পুলিশ কর্মকর্তা ডেকে জিজ্ঞেস করেন। তখন মেয়েটি বলে খেলার সময় কর্ক ওখানে পড়ে। আনতে গিয়ে শুনি, ‘মা আমাকে বাঁচাও’। এরপর বড় বোনকে ঘটনা বললে, সে গিয়ে কান পাতছে, কান পেতে শব্দ শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে ‘কেডা রে’, তখন পাইপের মধ্যে থেকে বলে ‘মা আমারে বাঁচাও’। শোনার পর পাম্পে যারা কাজ করে তাদের ডাক দিছে। তারা হেসে চলে গেছে। এরপর পাশ দিয়ে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা যাওয়ার সময় তারা ডেকে ঘটনা জানায়। তারা দড়ি ফেলে অনেকক্ষণ চেষ্টা করছে। চেষ্ট করে উঠাতে পারেনি। এরপর জানাজানি হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাসির বলেন, তিন বছর ধরে ওইটা পড়ে আছে। কেন তারা মুখ বন্ধ করে দিলো না? ওখানে তো ছেলেপেলে খেলতেই পারে। উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বলেছেন ওর ভেতরে কিছু নাই। না থাকলে এখন আসলো কোথা থেকে? নাই বলছে এই কারণেই তো দ্রুত হয় নাই। কার্যক্রম স্থবির না হলে ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.