এরা আমার সন্তান, এ আমার ক্ষতি, জাতির ক্ষতি

এরা আমার সন্তান, এ আমার ক্ষতি, জাতির ক্ষতি- পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবান আক্রমণে ১৩২ শিক্ষার্থীসহ ১৪১ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মুখে এ বিলাপ শোনা গেছে। ছয় থেকে আটজন তালেবান আততায়ী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অবশ্যই শরিফ অকুস্থলে গিয়ে হতাহতদের পরিবারবর্গের প্রতি তার সমবেদনা জ্ঞাপন করতে চেয়েছেন। আর্মি পাবলিক স্কুলে প্রথম থেকে দশম গ্রেডের ছাত্ররা পড়ত। মঙ্গলবার সকালে জনাছয়েক বন্দুকধারী স্কুলে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। আর্মি কমান্ডোরা শিগগিরই অকুস্থলে পৌঁছে বন্দুকধারীদের সঙ্গে গুলিবিনিময় শুরু করে। স্কুল প্রাঙ্গণের চারপাশে সাঁজোয়া গাড়ি নিয়োগ করা হয়। ৯ ঘণ্টা টানা অপারেশনের পর স্কুলটি জঙ্গিমুক্ত করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা তালেবান গোষ্ঠীকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার শপথ নিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকের আগে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পাকিস্তানের মাটি থেকে তালেবানের শেকড় না উপড়ে ফেলা পর্যন্ত আমরা থামব না। লুকিয়ে থাকা সব সন্ত্রাসীকে এক এক করে খুঁজে বের করা হবে। পাকিস্তানের মাটিতে ওদের ঠাঁই নেই।
এদিকে, সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে তালেবান হামলার প্রতিশোধ নেবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ। পেশোয়ারে নিষ্পাপ শিশুদের ওপর হামলাকে তিনি ‘জাতির হৃদয়ে আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ‘অমানুষ জানোয়ারদের’ নির্মূলের অঙ্গীকার করেন। বুধবার এ খবর দিয়েছে পাকিস্তান টুডে। মঙ্গলবার সেনাপ্রধান বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা জাতির হৃদয়ে হামলা চালিয়েছে। নিষ্পাপ শিশুদের প্রতি ফোঁটা রক্তের দাম তাদের দিতেই হবে।’ শিশুদের হত্যাকাণ্ডকে তিনি ‘কাপুরুষতা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ হামলা প্রমাণ করে সন্ত্রাসীরা শুধু পাকিস্তানের শত্র“ নয়, তারা মানবতার শত্র“।’ রাহেল শরিফ হুংকার দিয়ে বলেন, ‘আমি আবারও বলতে চাই, এই জাতির ইচ্ছাকে কেউ অবদমন করতে পারবে না। এসব অমানুষ জানোয়ারদের শেষ ঠিকানায় না পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত আমরা আক্রমণ চালিয়ে যাব।
এর আগে বেলুচিস্তানে এক প্যারেড অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বলেন, বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করব। এই প্রদেশ একটি শান্তির রাজ্যে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘এটা খুব স্বস্তির যে, বেলুচিস্তানের জনগণ দেশবিরোধী সব বর্জ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এবার তারা তাদের ভাগ্য বরণ করবে। এ বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বলে মন্তব্য করেন।
মোল্লা ফজলুল্লাহকে হস্তান্তরে কাবুলে রাহেল শরিফ
পেশোয়ারে তালেবান হামলার পর বুধবার আফগানিস্তান সফরে গিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ। তালেবান প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহকে হস্তান্তরের বিষয়ে কাবুল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জেনারেল শরিফ বলেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার মোস্টওয়ান্টেড আসামি তালেবান প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহ। ইসলামাবাদের কাছে তাকে হস্তান্তরের জন্য তিনি আহ্বান জানান।
এ সফরে শরিফ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা ফোর্সের (ইসাফ) কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ডের সঙ্গে দেখা করেন। ডানফোর্ড পাকিস্তানের স্কুলে হামলার নিন্দা জানান ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিও এ হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানে দুঃসময়ে পাশে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
ওদিকে, কাউকে জিম্মি করা নয়, সবাইকে হত্যা করাই ছিল পেশোয়ারের স্কুলে হামলা চালানো তালেবান জঙ্গিদের লক্ষ্য। মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক অসীম বাজওয়া এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে দ্য ডন। কাউকে জিম্মি করার চেয়ে শিশুদের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই হামলাটির পরিকল্পনা করেছিল তালেবান, দাবি করেছেন তিনি। ‘ঘটনা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিষ্পাপ ওই শিশুদের হত্যা করা, আর তাই করেছে তারা,’ বলেছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.