তেল অপসারণের নামে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে by মামুনুর রশীদ

(সুন্দরবনের শ্যালা নদীর দুই পাড়ের গোলপাতা গাছগুলো গতকাল সকাল থেকে কাটা শুরু করেন বন বিভাগের কর্মীরা। মৃগমারী এলাকা থেকে গতকাল দুপুরে ছবিটি তুলেছেন এহসান-উদ-দৌলা) সুন্দরবনের শ্যালা নদীর দুই পাশের সংরক্ষিত বনে গাছের গায়ে লেগে থাকা তেল অপসারণের নামে ডালপালা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো গাছই কেটে ফেলতে দেখা গেছে। তেল অপসারণের জন্য বন বিভাগের নিয়োগ করা কর্মীরা বলছেন, বন কর্মকর্তাদের আদেশেই তাঁরা এমনটি করছেন। তবে কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেননি। গতকাল বুধবার দুপুরে বন বিভাগের চাঁদপাই লঞ্চঘাট থেকে মৃগমারীর দিকে একটু এগোতেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ল। নদীর বাঁ পাশে তেল লেগে থাকা একটি ছোট কেওড়াগাছের ডালপালা দা দিয়ে ছাঁটছিলেন দুজন লোক। তাঁরা জানালেন, চার দিন ধরেই বন বিভাগের হয়ে তেল অপসারণের কাজ করছেন তাঁরা। কী কারণে গাছটির ডালপালা ছাঁটা হচ্ছে জানতে চাইলে তাঁদের একজন বলে উঠলেন, ‘গাছের তেল যাতে আর পানিতে না নামতি পারে তাই কাটতিছি।’ এভাবে যত দূর পর্যন্ত নদীর ওপর ঝুলে পড়া তেলমাখা গাছ ও লতাপাতা আছে, সেগুলো পরিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি। গাছের ডাল ছাঁটার নির্দেশ কখন দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে পাশেই নৌকার ওপর বসে থাকা আরেকজন কথা বলে উঠলেন; যিনি ছেঁটে ফেলা ডালগুলো তুলে নৌকার ওপর স্তূপ করে রাখছিলেন। তিনি বললেন, সকালে চাঁদপাই রেঞ্জ অফিস থেকে এ নির্দেশ এসেছে। এরপর আরেকটু সামনে এগোতে নদীর অপর পাশে বন বিভাগের নিয়োগ করা আরও দুজন লোককে তেলমাখা গোলপাতাগাছ প্রায় গোড়া থেকে কেটে ফেলতে দেখা গেল। তাঁরা জানালেন, নদীর দুই ধারে এ রকম তেল লাগা প্রচুর সুন্দরী, গেওয়া, হরগজিসহ নানা ধরনের লতাপাতা আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হুসাইন চৌধুরী দাবি করেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশ তাঁরা দেননি। বরং তাঁরা গাছগুলো থেকে তেল অপসারণের কথা বলেছেন। চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, বন বিভাগের কর্মকাণ্ডকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এটা করে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা অনেক নিচের দিকে আন্ধারমানিক থেকে তাম্বুলবুনিয়া পর্যন্ত কাজ করেছি। মৃগমারীর দিকে আমাদের কোনো লোক ছিল না।’ তিনি আরও দাবি করেন, বন বিভাগ থেকে নিয়োগ করা প্রতিটি নৌকায় একজন করে গার্ড রয়েছেন। যাতে করে এ সুযোগে কেউ গাছ কাটার মতো কাজ করতে না পারে।

No comments

Powered by Blogger.