মৃত্যুর ভান করে বেঁচেছি

পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবানের বর্বরোচিত হামলার হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছে প্রাণে বেঁচে আসা এক কিশোর। বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বের করে গুলি করেছে ঘাতকরা। স্মরণকালের ইতিহাসে ভয়াবহতম এ হামলায় নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়েছে পাকিস্তানের তালেবানরা। ১৬ বছরের সালমান (পরিবর্তিত নাম) জানায় কিভাবে দু’পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরার ভান করে বাঁচতে সক্ষম হয়েছে সে। পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালের ট্রমা ওয়ার্ডের বিছানা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে সালমান জানায়, বিদ্যালয় মিলনায়তনে সহপাঠীদের সঙ্গে পেশাদার জীবনের দিকনির্দেশনা বিষয়ক একটি সেশনে উপস্থিত ছিল সে। এমন সময় চার বন্দুকধারী আধাসামরিক উর্দি পরে হলে ঢোকে। কেউ একজন চিৎকার করে বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে পড়তে বলে। বন্দুকধারীরা আল্লাহু আকবার চিৎকার করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরপর তাদের একজন উচ্চস্বরে বলে ওঠে, বেঞ্চের নিচে অনেক শিশু লুকিয়ে আছে। ওদেরকে খুঁজে বের করো। সালমান এমন সময় দেখতে পায় বড় এক জোড়া বুট তার দিকে এগিয়ে আসছে। ততক্ষণে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল সে। কেননা, দু’পায়েই হাঁটুর নিচে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখনই সালমান সিদ্ধান্ত নেয় বাঁচতে হলে মরার ভান করে পড়ে থাকতে হবে। টাই গুটিয়ে মুখে গুঁজে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকে যেন মুখ থেকে চিৎকার বের না হয়। অসহনীয় যন্ত্রণা হজম করে ফেলতে চেষ্টা করে। ওই বুট পরা অস্ত্রধারী লুকিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের খুঁজতে থাকে। আর খুঁজে পাওয়া মাত্রই বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয় তাদের শরীর। সালমান বললো, আমি চেষ্টা করলাম যতটা নড়াচড়া না করে থাকা যায়। চোখ বন্ধ করে রাখলাম। মনের অজান্তেই অপেক্ষা করছিলাম গুলি খাওয়ার জন্য। আমার শরীর কাঁপছিল। মৃত্যুকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি। আমার দিকে এগিয়ে আসা কালো বুটের দৃশ্য আমি কখনওই ভুলবো না। আমার মনে হয়েছিল ওটাই মৃত্যু, যা আমার দিকে ধেয়ে আসছে। সালমান যখন এসব কথা বলছিল তখন রক্তাক্ত বিছানার পাশে বসে ছেলেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন তার পিতা। সে আরও জানায়, কিছু সময় পর বন্দুকধারীরা হল থেকে বের হয়ে যায়। আরও কয়েক মিনিট সেখানে অপেক্ষা করি। এরপর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু পড়ে যাই। হামাগুড়ি দিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে সেখানকার দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই। দেখলাম আমাদের অফিস সহকারীর শরীরে আগুন জ্বলছে। তিনি চেয়ারে বসে আছেন আর রক্তের ফোঁটা নিচে পড়ছে অবিরত। স্কুলে কর্মরত এক সেনা সদস্যের মৃতদেহও দেখতে পায় সে। এরপর এক দরজার পেছনে লুকাতে গিয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলে সে। পরে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালের শয্যায়।

No comments

Powered by Blogger.