তারেককে সামলান -খালেদাকে হাসিনা

লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বক্তৃতা দেয়ার পরের দিন এর জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারেক রহমানের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, আপনার কুপুত্রকে জিহ্বা সামলে কথা বলতে বলবেন। নইলে বাংলার মানুষ সহ্য করবে না, বিশ্ববাসীও মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানকে ‘অশিক্ষিত জানোয়ার’ উল্লেখ করে বলেন, তার হাতে অনেক রক্ত। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমান সহ ২৪ নেতাকর্মী এবং বহু মানুষের রক্ত। এসব হত্যার বিচার হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি স্লোগান (ওরা মানুষ মারছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি) স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইয়াহিয়া খান ছিল একটা জানোয়ার। তার (তারেক রহমান) কথায়ও ইয়াহিয়ার সুর। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, বেগম জিয়া তার ছেলেদের কি শিক্ষা দিলেন? রাষ্ট্রের টাকা কেন অপচয় করা হলো? পুত্রদের মানুষ না করে বড় চোর করেছেন। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের আদালতেও এ বিষয়ে রায় এসেছে। সিঙ্গাপুর থেকে কিছু টাকা ফেরতও এনেছি। এখন লন্ডনে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলছে। তার নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃত করে যাচ্ছে। লেখাপড়া শিখলে মানুষের মতো কথা বলতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে মানুষ হত্যার পরিকল্পনা করে। কার চাকরি থাকবে, কারটা যাবে তার তালিকা করে। দুর্নীতির মহোৎসব আর প্রতিটা কাজে কমিশন নিতো। ভাগ নিয়েও ঝামেলা হতো তাদের।
চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিএনপি বাঁচাতে পারছে না বলেই তারেক রহমান এসব বলে যাচ্ছেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নিজামীর সাজা দিয়েছি, তাদের মনে বড় কষ্ট। সবার বিচার হবে। রায়ও একে একে কার্যকর হবে। আমি জানি দুঃখটা কোথায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এদের ছেড়ে দেবে না। যুদ্ধাপরাধী ও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সব হত্যা মামলার বিচার হবে। খালেদা-তারেক আইভী রহমানের খুনি। এরা খুন আর হত্যা ছাড়া কি করতে জানে! এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা পরাজিতদের দোসর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করেছেন। তিনি অপরাধ করেছেন বলেই তার বিরুদ্ধে মামলায় আদালতে হাজিরা দেন না। পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান। আদালতে মামলা চলাকালে তার আইনজীবীরা আদালতকে অসম্মান করেন, গালাগালি করেন। বিশ্বের কোন সভ্য দেশেই এ ধরনের অসভ্য কাজ কেউ করে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত সাধু হলে, কোর্টে যেতে ভয় পান কেন? এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। উনি তো (খালেদা জিয়া) কিছুই মানেন না, কোন কিছু মানার অভ্যাস নাই। উনি স্বাধীনতায়ও বিশ্বাস করেন না।
জিয়াউর রহমানই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন- বিএনপির এমন দাবির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া আমাকে আনবে কোত্থেকে। জিয়া কলকাতায় আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে, খালেদা জিয়া বাসায় আসতে চেয়েছিল, দেখা করিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি মিথ্যা বলতে পারে। জিয়া আমাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পর্যন্ত ঢুকতে দেয়নি। মিলাদ পর্যন্ত পড়তে দেয়নি। জিয়া কিভাবে আনবে? এ মাটি আমার মাটি, ১/১১-তেও আমার নামে মামলা ছিল, আমি ফিরে এসেছি।
আলোচনা সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, তারেকের বক্তব্যে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা প্রলাপ বকবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করা মানে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা। তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের মুখোশ উন্মোক্ত হবে। পাগলের শাস্তি পাগলের মতোই হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, কে কি বললো তা বিষয় নয়। তার কথার জবাব দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ডিফেন্ড করতে হবে এমন নয়।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.