সুন্দরবনে বিপর্যয় নৌ-মন্ত্রণালয় দায়ী

সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি দায়ী করেছে সংসদীয় কমিটি। তাদের বক্তব্য, মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণেই ত্রুটিপূর্ণ জাহাজটি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করছিল। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান ড. হাছান মাহমুদ। তিনি ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। বৈঠকে শেলা নদীতে নৌ-চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘষিয়াখালী-মোড়েলগঞ্জ নৌপথটি খনন করে সেখান দিয়ে নৌ-চলাচল করার সুপারিশ করেছে কমিটি। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সুন্দরবনে যে জাহাজটি ডুবে যায় তার কোন ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। কিভাবে একটি ফিটনেসবিহীন জাহাজ তেল নিয়ে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করে তা জানতে চাওয়া হয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে। শুধু তা-ই নয়, এভাবে বহু ফিটনেসবিহীন জাহাজ প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে তেল নিয়ে চলাচল করে। এটা সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, সুন্দরবনের বিপর্যয় নিয়ে কমিটি বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ শেষে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করা সমস্ত জাহাজ বন্ধের সুপারিশ করেছে। অতি দ্রুত এ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সভাপতি বলেন, জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর তেল সংগ্রহের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা মুখ্য হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা সে ভূমিকা রাখেনি। এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। এদিকে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে নিয়োজিতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে পদ্ধতিতে তেল সংগ্রহ হচ্ছে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ওই এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিক্যাল টিম পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে কাজে লাগানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির সদস্য টিপু সুলতান বলেন, সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে নৌ-রুট বন্ধে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেতো। নৌ মন্ত্রণালয়ে সেই সুপারিশ পাত্তা না দেয়ায় এক ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এর আগে সুন্দরবনের শেলা নদীতে নৌযান স্থায়ীভাবে বন্ধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তেল দূষণের প্রেক্ষাপটে ১৪ই ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে  শেলা নদীতে নৌযান স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে চান পরিবেশ ও বন উপ-মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। একই বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নাকচ করে দেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বৈঠক শেষে শাজাহান খান বলেন, শেলা নদীতে স্থায়ীভাবে নৌ চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। তবে স্থায়ীভাবে নৌ-চলাচল বন্ধের কথা এখন ভাবা হচ্ছে না। উল্লেখ্য, পরিবেশ ও বন উপ-মন্ত্রীর অনুরোধের আগেই সুন্দরবনে সব ধরনের বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এদিকে  শেলা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধে মংলা বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়বে বলে আগে থেকেই বলে আসছিলেন নৌ-মন্ত্রী। গত ৯ই ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে একটি ট্যাংকার দুর্ঘটনাকবলিত হয়। ইতিমধ্যে জাহাজটি উদ্ধার করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হলেও তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.