স্নায়ুযুদ্ধের শত্রুর সঙ্গে আবার বন্ধুত্ব আমেরিকার

স্নায়ুযুদ্ধের শত্রুতা ভুলে আবার বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কিউবা-আমেরিকা সম্পর্কে আরেকটি নতুন যুগের সূচনা হল। দীর্ঘদিনের শত্রু দেশ কিউবার সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বুধবার মধ্যরাতে হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া ঘোষণায় ওবামা বলেন, আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিউবার জনগণের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বদলে ফেলবে। এই পরিবর্তনের ফলে কিউবার জনগণের মধ্যে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে এবং আরও অনেক সুযোগ তৈরি হবে। কিউবাকে একঘরে করার যে কৌশল নেয়া হয়েছিল তা ছিল অনমনীয় ও অকার্যকর।
তিনি বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর আবার ওয়াশিংটন তা স্থাপন করবে। ১৯৬১ সালে হাভানায় বন্ধ করে দেয়া দূতাবাস আগামী মাসে পুনরায় খোলার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, কিউবার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ সেকেলে ছিল এবং এই পরিবর্তন ৫০ বছরে কিউবার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির খুব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
ওবামা জানান, দু’দেশের মধ্যে মুদ্রার বিনিময়ও চালু এবং মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য কিউবায় পণ্য রফতানির সুযোগ সহজ হবে।
এদিকে, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ত্রো এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিউবার প্রেসিডেন্ট তার দেশের ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার একই সময়ে ওয়াশিংটনে ওবামার ভাষণের সময় কিউবায় জাতীয় টেলিভিশন ভাষণে রাউল কাস্ত্রো বলেন, কিউবা অনেকদিন ধরে যে চেষ্টা করছিল, এই পরিবর্তন তার সামান্য কিছু, আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে প্রধান সমস্যাগুলো মিটে গেছে। পাঁচ দশক ধরে চলা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তার দেশের মানবিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সময় এসেছে এখন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সার্বভৌম, গণতন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজি কিউবা। আমাদের মধ্যে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সভ্য পদ্ধতিতে একসঙ্গে বসবাস করার উপায় আমাদের শিখতে হবে। আর এ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।’
এর আগে ক্যাস্ত্রো ও ওবামা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ব্যাপারে একমত হন। মঙ্গলবার দুই প্রেসিডেন্ট ৪৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে ফোনালাপ করেন। ১৯৫৯ সালে কিউবা বিপ্লবের পর দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই প্রথম সরাসরি কথা বললেন। ভ্যাটিকান সিটিতে কানাডার প্রতিনিধি ও পোপ ফ্রান্সিসের ১৮ মাসের গোপন আলোচনার ভিত্তিতে নতুন করে এ বন্ধুত্বে সূচনা হয়। পোপ এ সম্পর্ককে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। তবে এই নিষেধাজ্ঞা কেবল রিপাবলিকানদের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের অনুমোদন পেলেই তুলে নেয়া সম্ভব। রিপাবলিকানরা যথারীতি এর বিরোধিতা জানিয়েছে। ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনের একজন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেব বুশ এই ঘোষণার পর একে বারাক ওবামার ‘ভুল পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসার কিছু আগেই পাঁচ বছর আগে কিউবায় আটক হওয়া মার্কিন একজন ঠিকাদার অ্যালান গ্রস দেশে ফিরে এসেছেন।এছাড়া ২০ বছর ধরে কারা ভোগ করছিলেন আমেরিকার এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকেও মুক্তি দিয়েছে হাভানা।
এর বিপরীতে ওয়াশিংটন তিনজন হাই-প্রোফাইল কিউবান বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যারা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সভ্য পদ্ধতিতে একসঙ্গে বসবাস করার উপায় আমাদের শিখতে হবে
পাঁচ দশক ধরে চলা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে
রাউল ক্যাস্ত্রো
এই পরিবর্তনে কিউবার জনগণের মধ্যে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হবে
দু’দেশের মধ্যে মুদ্রার বিনিময় এবং মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য কিউবায় পণ্য রফতানির সুযোগ সহজ হবে
বারাক ওবামা

No comments

Powered by Blogger.