ওবামার ঘোষণাকে স্বাগত জানাল লাতিন আমেরিকা

কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন লাতিন আমেরিকার নেতারা। এ ছাড়া দেশে ওবামার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও মার্কিন জনগণের একটি বড় অংশ। খবর এএফপি ও রয়টার্সের। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের ১০০ মাইলেরও কম দূরে কিউবায় ১৯৫৯ সালে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দুই বছর পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে ওবামা কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রায় একই সময়ে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো মার্কিন প্রেসিডেন্টের নীতি পরিবর্তনের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনাকারী বলে পরিচিত ভেনেজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সবার আগে ওবামার ঘোষণাকে স্বাগত জানান। মাদুরো বলেন, ‘ওবামার এই ঐতিহাসিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই।’ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্চনার বলেন, তাঁদের প্রজন্মের ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের যোদ্ধারা’ ভেবেছিলেন,
তাঁরা কিউবা-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের বিষয়টি দেখে যেতে পারবেন না। ওবামার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাঁরা বলেন, এখন হয়তো সেই সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হতে পারে। আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস-এ (ওএএস) ১৯৬২ সাল থেকে কিউবার সদস্যপদ নেই। ওএএসের মহাসচিব হোসে মিগুয়েল ইনসালজা বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার উদ্যোগে শুধু কিউবাই নয়, লাতিন আমেরিকার সব দেশের সঙ্গেই ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর একটি পরিস্থিতি দূর হবে। আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিউবায় কাস্ত্রোর শাসনের কারণে আমাদের নীতিতে দেশটি একঘরে ছিল। কিউবা প্রশ্নে মার্কিন নীতি পরিবর্তনে প্রেসিডেন্ট ওবামার ঘোষণাকে আমি সমর্থন করি।’ রয়টার্স/ইপসসের এক জরিপে ৪০ শতাংশের বেশি মার্কিন কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ২০ শতাংশ মার্কিন সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের বিপক্ষে মত দেন। আর সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের কোনো উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ৩৯ শতাংশ। জরিপে মোট ৩১ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়। চলতি বছরের ১০ জুলাই থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। পোপ ফ্রান্সিস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা, স্পেনসহ অনেকেই এই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওবামা গত বুধবার তাঁর ঘোষণায় বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘৫০ বছরের মধ্যে কিউবার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন’।
যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক
সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস, হিলারি ক্লিনটন ও বিভিন্ন দেশ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা ওবামার। স্বাগত রাউলের ২০০৬
ফিদেল কাস্ত্রোর স্থলাভিষিক্ত হন ভাই রাউল ২০০১
নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেন জর্জ ডব্লিউ বুশ ১৯৮০
সোয়া লাখ কিউবান যুক্তরােষ্ট্র চলে যান ১৯৬২
ক্ষেপণাস্ত্রসংকট: কেনেডির বাণিজ্য অবরোধ জানুয়ারি ১৯৬১
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ১৯৬০
মার্কিন মালিকানাধীন ব্যবসা জাতীয়করণ ১৯৫৯
বিপ্লবের মাধ্যমে বাতিস্তাকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন কাস্ত্রো সূত্র: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.