ইসরায়েলি দখলদারি অবসানে সময় বেঁধে দিল ফিলিস্তিনিরা

মধ্যপ্রাচ্যে এক বছরের মধ্যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব দিয়েছে জর্ডান। বুধবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতের পর ফিলিস্তিনের পক্ষে তারা এ প্রস্তাবটি তোলে। এ ছাড়া প্রস্তাবটিতে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করেতে বলা হয়েছে। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা ও এএফপির। ফিলিস্তিন জাতিসংঘের শুধু পর্যবেক্ষক সদস্য হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে জর্ডান। কেবল একটি সদস্য দেশই নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব তুলতে পারে। দীর্ঘ আলোচনার পরই জর্ডান প্রস্তাবটি তোলে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি কূটনীতিক রিয়াদ মানসুর গত বুধবার বলেন, আরব-সমর্থিত প্রস্তাবটি মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ সবার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখব, যদি তারা তা করতে আগ্রহী থাকে।...অর্থবহ কিছু অর্জনের জন্য যারাই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ প্রস্তাবটিতে এক বছরের মধ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে এমন একটি শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে, যা ‘দুটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের স্বপ্নকে পূরণ করবে’। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিও একটি প্রস্তাব তৈরি করছে, যাতে দুই বছরের মধ্যে শান্তি আলোচনা শেষ করার কথা বলা আছে বলে জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস।
ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর ও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। এ রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। এসব এলাকা ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় দখল করে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। খসড়া প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর বিষয়টি হতে হবে কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। এর মধ্যে রয়েছে, ১৯৬৭ সালের সীমানা, নিরাপত্তা সমঝোতা এবং ‘জেরুজালেম হবে দুই রাষ্ট্রের অংশীদারমূলক রাজধানী, যা উভয় পক্ষের বৈধ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে এবং প্রার্থনা করার স্বাধীনতার সুরক্ষা দেবে’। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘উভয় পক্ষকে বসতি সম্প্রসারণসহ সব ধরনের একতরফা ও অবৈধ পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাব্যতা নষ্ট করে দিতে পারে।’ ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটির ওপরে কবে ভোটাভুটি হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জর্ডান বলেছে, তারা এখনই ভোটাভুটির চেষ্টা করবে না। তার অর্থ, এ নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রস্তাবের ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চলবে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি আটকে দিতে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবে কি না, তাও জানা যায়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। লন্ডন সফরকালে বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কোনো প্রস্তাব উত্থাপনের ব্যাপারে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। তবে সবাইকে একটা সুচিন্তিত পথে এগোতে হবে। পথটা সমস্যার সমাধান করবে; অবস্থা আরও শোচনীয় করবে না।
হলোকাস্ট থেকে ‘কিছুই শেখেনি’ ইউরোপ: ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইউরোপ সুর নরম করায় ক্ষুব্ধ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ আদালত বুধবার গাজার নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পর তিনি বলেন, ইউরোপীয়রা হলোকাস্ট থেকে কিছুই শেখেনি। নেতানিয়াহুর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লুক্সেমবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় আদালত হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিল। অথচ হামাস অগণিত যুদ্ধাপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, যে ইউরোপের মাটিতে ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ইউরোপের অনেকেই কিছুই শেখেনি।’ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রশ্নে ইউরোপের অবস্থান
রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: ইউরোপের যেসব দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সুইডেন, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, সাইপ্রাস ও বুলগেরিয়া
পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস: ফিলিস্তিনকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ইউরোপের যেসব দেশের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে স্পেন (২২ নভেম্বর ২০১৪), আয়ারল্যান্ড (২২ অক্টোবর, ২০১৪), যুক্তরাজ্য (২৩ অক্টোবর, ২০১৪), ফ্রান্স (২ ডিসেম্বর ২০১৪) এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (১৭ ডিসেম্বর ২০১৪)

No comments

Powered by Blogger.