চট্টগ্রাম আদালতে ৯০ মামলার নথি গায়েব

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার মামলা নং ২১৮/১২। চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই মামলার ১১টি আদেশ নথিতে লেখা হয়নি। একই আদালতে এ রকম ৯০৪টি মামলায় ১ হাজার ৪০০ আদেশ লেখা হয়নি। খোঁজ মিলছে না বিচারাধীন ৯০টি মামলার নথিও। ওইসব মামলার মধ্যে রয়েছে হত্যা, চেক প্রতারণা, মাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলাও। মো. সাইদুল ইসলাম সিহাব বেঞ্চ সহকারীর দায়িত্ব পালনকালে এসব অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার নথি না থাকায় এবং ধার্য তারিখ ডায়েরিতে না লেখার কারণে মামলাগুলো পরিচালনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৫ জুন চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক হিসেবে যোগদান করেন মাকসুদুর রহমান। যোগদানের পর এসব অনিয়ম তার কাছে ধরা পড়ে এবং চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ ওবায়দুস সোবহানের দফতরে তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মামলার নথি না পাওয়ার ঘটনায় আদালতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেঞ্চ সহকারী শিহাবকে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে শোকজের সন্তোষজনক জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজের মাত্র ৪ কার্য দিবসের পর ১ ডিসেম্বর থেকে আদালত শীতকালীন অবকাশে বন্ধ হয়ে যায়। অর্থের বিনিময়ে মামলার নথি সরিয়ে ফেলা হয়েছে কিনা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন আদালতসংশ্লিষ্টরা। আদালতের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেঞ্চ সহকারী শিহাব কর্তব্যকাজে চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। প্রায় বিলম্বে অফিসে আসায় একাধিকবার বিচারকের ভর্ৎসনার শিকার হন। ছুটি ছাড়া অফিসে না আসায় একাধিকবার তাকে শোকজও করা হয়েছে। ১ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে অতিরিক্ত পিপি হুমায়ন কবির জানান, নতুন ব্যক্তিকে বেঞ্চ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেঞ্চ সহকারী হিসেবে শিহাব নিজে না বুঝলেও পুরাতনদের কাছ থেকে সহায়তাও নেননি। মামলার ফাইল রাখা হতো এলোমেলোভাবে, মামলার ধার্য তারিখ খাতায় লেখা হতো না, হয়নি বহু মামলার আদেশ লেখাও। এ কারণে আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে আদালতকে আইনজীবীরা বহুবার জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বেঞ্চ সহকারীকে অন্য আদালতে বদলি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার আদেশ না লেখাসংক্রান্ত চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ১ম আদালতের একটি নোটের সারসংক্ষেপে দেখা গেছে, অনেকগুলো মামলায় ডায়েরিতে তারিখ প্রদান করা এবং মামলার আগামী ধার্য তারিখ ডায়েরিতে অগ্রবর্তী করা হয়নি। এমনকি অনেকগুলো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হলেও কোনো প্রদর্শনী চিহ্নিত করা হয়নি। অনেকগুলো মামলার চার্জ গঠন করা হলেও চার্জ ফ্রেম করা হয়নি। এসব অভিযোগও রয়েছে শিহাবের বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্ত বেঞ্চ সহকারী শিহাব বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়, আদালত ২৬ নভেম্বর শোকজ করলে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এলোমেলো অবস্থায় থাকা সব ফাইল ঠিক করে দিয়েছি। আর নথি গায়েবের অভিযোগ থাকলে যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ১ম আদালত আমাকে বদলির জন্য কর্ম অবমুক্তি দিতেন না। কয়েকজন কলিগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। হঠাৎ করে বদলি করার কারণে সামান্য কিছু মামলার আদেশ লেখা হয়নি। শোকজ করার পর ওইসব মামলার আদেশ লিখে দিয়েছি।
কুমিল্লার মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম শিহাব ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর বেঞ্চ সহকারী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। শুরু থেকে চট্টগ্রাম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ১ম আদালতে দায়িত্ব পালন করেন। ৩০ অক্টোবর এক আদেশে তাকে যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ৫ম আদালতে বদলি করা হলে ২ নভেম্বর যোগদান করেন।

No comments

Powered by Blogger.