৪০ দেহরক্ষী নিয়ে দুদকে মুসা বিন শমসের

বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখোমুখি হয়েছিলেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। গতকাল সকালে ৪০ জন দেহরক্ষী নিয়ে দুদক কার্যালয়ে যান তিনি। দেহরক্ষীদের মধ্যে চারজন নারী সদস্যও ছিলেন। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন মুসা। এক সময়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে ব্যবসা শুরু করা মুসা বিন শমসের আলোচনায় আসেন অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে। ফ্যাশনদুরস্ত বলে তিনি প্রিন্স মুসা হিসেবেও পরিচিত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে সুইস ব্যাংকে থাকা ৫১ হাজার কোটি টাকা রয়েছে মুসা বিন শমসেরের। তিনি এ টাকা তুলতে পারছেন না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, সেখানে আছে ঠিক। এ টাকা সংগ্রহ করতে পারলে তিনি পদ্মা সেতুসহ দেশীয় প্রকল্পে ব্যয় করবেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কথা বলার পর তিনি নিজেও খুশি, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারাও খুশি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমার বিষয়ে বলা হয়, আমি সাত বিলিয়ন ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছি। কেউ কোন দিন এত টাকা এ দেশে আয় করতে পারেনি, পারবেও না। আমি এ টাকা বিদেশে উপার্জন করেছি। গতকাল বেলা ১টায় দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন। মুসা বিন শমসের বলেন, দুদক আমাকে ডেকেছে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক বিধায় আমি এখানে এসেছি। অভিযোগের তদন্ত নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সব গল্পেরই একটি ইতিহাস থাকে, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সত্য বেরিয়ে আসে। অর্থ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করলেও সুইস ব্যাংকে টাকা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেননি মুসা বিন শমসের। তিনি বলেন, সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ওই টাকা উদ্ধার করা গেলে পদ্মা সেতু, দুস্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষকসহ সামাজিক গঠনমূলক কর্মকাণ্ড অবদান রাখবো। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। তাহলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন কি সত্য নয়- এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বিচার কিংবা তদন্তের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। এ সব রিপোর্ট নিয়েও আমি বিচলিত নই। তবে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আমি খুশি। দুদক ও খুশি। কথা বলার সময় দু’পাশে কালো কোট ও কালো সানগ্লাস পরা দেহরক্ষীরা ছিল সতর্ক অবস্থায়। এ সময় দুদকের আশপাশে মোতায়েন বিপুল সংখ্যক পুলিশ। সাংবাদিকরা আরও তথ্য জানতে চাইলে তার দেহরক্ষীরা সাদা রঙের ঢাকা মেট্রো গ-৩৫-০০৮১ বিশেষ গাড়িতে তাকে দ্রুত তুলে দেন।
সাতটি গাড়িতে কালো কোট-টাই পরা দেহরক্ষী নিয়ে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আসেন মুসা বিন শমসের। কালো রঙের ব্লেজারের সঙ্গে তার পরনে ছিল সবুজ শার্ট, লাল রঙের টাই এবং সোনালি রঙের হাতঘড়ি। দুদকে প্রবেশ করার আগে তার সামনে ও পেছনে এক ডজন গাড়ি ছিল। চারজন নারী দেহরক্ষীসহ প্রায় ৪০ জনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মকর্তা নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে তার দেহরক্ষীরা দুদকের প্রধান প্রাঙ্গণের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছিল।
অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক কার্যালয়ে মুসা বিন শমসেরকে প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিনিয়র উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী। তাকে তলব করে গত ৪ঠা ডিসেম্বর তার গুলশানের বাসা ও বনানীর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক। বাণিজ্য সাময়িকী ‘বিজনেস এশিয়া’র সামপ্রতিক একটি প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে গত ৩রা নভেম্বর কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মুসা বিন শমসেরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। সুইস ব্যাংকে এ ব্যবসায়ীর সাত বিলিয়ন ডলার রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসা, তেল-বাণিজ্য ও কেনাবেচার মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন মুসা। ড্যাটকো নামে তার জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা প্রতষ্ঠান রয়েছে। প্রতিবেদনে মুসাকে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসার ‘জনক’ বলে অভিহিত করা হয়। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাকে প্রিন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাজ্যের দ্য উইকলি নিউজ সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসা বিন শমসের সব সময় সবচেয়ে সেরা জিনিস ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
দুদক সূত্র জানায়, ব্যাংক অব সিলন-এ মুসার স্ত্রী কানিজ ফাতেমার অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা হয়। ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ওই টাকা মুসার কাছে গেছে বলে একটি সূত্রের মাধ্যম জানতে পারে দুদক। আর এ টাকা লেনদেনের সঙ্গে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যাবসায়ী জড়িত। তিনি মুসার বেয়াই।

No comments

Powered by Blogger.