চমকে দিলেন জাহিদ সিলেটে তোলপাড় by ওয়েছ খছরু

(দক্ষিণ সুরমা বিএনপির সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু জাহিদ) জাতীয় কিংবা স্থানীয় রাজনীতি। সবখানেই মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। বরং একপক্ষ সব সময় অপর পক্ষের খুঁত খোঁজেন। আর দলীয় কর্মকাণ্ডেও দেন বাধা। আওয়ামী লীগের ভয়ে তটস্থ থাকেন বিএনপির কর্মীরা। কিন্তু উল্টো ঘটলো সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রাজনীতিতে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের এককালের সভাপতি, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ সরাসরি গিয়ে উপস্থিত হলেন বিএনপির সম্মেলনে। বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে কম সমাদর করা হয়নি। সম্মেলনে তাকে দেয়া হয় বিশেষ অতিথির মর্যাদা। মাইকে নাম ঘোষণার পর দেন বক্তৃতাও। আবু জাহিদের সিলেটের রাজনীতিতে সম্প্রীতির নতুন মাত্রা যোগ করেছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। আর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সব মহলেই হচ্ছে আলোচনা। সিলেটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্পর্ক কখনও ভাল ছিল না। বরং রাজপথে মুখোমুখি, পাল্টাপাল্টি- এসব নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব হাজার মাইলের। বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি এমন এক পক্ষের সম্মেলনে আরেক পক্ষ যাওয়া তো দূরের কথা খুঁত করে কর্মসূচি বানচালের প্রচেষ্টা থাকে বেশি। এই অবস্থায় গত সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলনের আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন পর সিলেট-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদের নেতৃত্বে দক্ষিণ সুরমা বিএনপির সব ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের পর উপজেলা সম্মেলন করা হয় এবং এই সম্মেলনকে ঘিরে এক কাতারে এসে দাঁড়ান উপজেলার সব বিএনপি নেতা। এ কারণে সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের ভাব। সম্মেলনের প্রস্তুতি চলার সময় বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবু জাহিদকে দাওয়াত দেয়া হয়। সম্মেলনে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, সম্মেলন শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেক পর সেখানে উপস্থিত হন তিনি। সেখানে তার উপস্থিতিতে চমকে যান বিএনপি নেতারা। তাৎক্ষণিকভাবে মঞ্চেই তাকে বসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বক্তব্য দেয়ারও সুযোগ দেয়া হয়। বক্তব্য দিতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ বলেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকা ভাল। হানাহানি কিংবা হিংসাত্মক ভাব থাকা ভাল নয়। আওয়ামী লীগ সেটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, আমরা যখন কলেজে ছাত্র রাজনীতি করি তখন আমাদের সম্মেলনে ছাত্রদল কিংবা অন্য দলের নেতারা উপস্থিত হতেন। সম্মেলনে তারা দিতেন বক্তৃতাও। কিন্তু এখন আর সেই রাজনীতিক সম্প্রীতি দেখা যায় না। বিএনপির সম্মেলন শান্তিপূর্ণ হচ্ছে উল্লেখ করে আবু জাহিদ বলেন, আমরা সবাই দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা। রাজনীতির বাইরে আমরা সামাজিক মানুষ। সুতরাং সমাজের উন্নয়নে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি স্থানীয় উন্নয়নে বিএনপির নেতাকর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। বক্তব্য শেষ করার কিছু সময় আবু জাহিদ সম্মেলনস্থল থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসেন। এদিকে, আবু জাহিদের উপস্থিতি এবং তার রাজনৈতিক সম্প্রীতির ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও খুশি হন। তারাও আবু জাহিদকে ধন্যবাদ জানান। সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, যে যে দলই করুক না কেন, স্থানীয়ভাবে সবাই এক। আর বিএনপির সম্মেলনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার উপস্থিতি সুস্থধারার রাজনৈতিক সম্প্রীতির পরিচয় বহন করে। একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ। তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির হয়ে আবু জাহিদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি জানিয়েছেন, আমরা দাওয়াত দিয়েছি। বলেছি আসার জন্য। আবু জাহিদ সম্মেলনে আসায় দক্ষিণ সুরমার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো।

No comments

Powered by Blogger.