প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ শহিদুর

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) শহিদুর রহমান। বরং অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অনির্ধারিত বচসায়। মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বুধবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত টানা ২ ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদকালে অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহিদুর রহমানের কাছ থেকে ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা’ দাবির সপক্ষে প্রমাণাদি চান। কিন্তু তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শহিদুর রহমান দাবি করেন, সনদ দেয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তার ইন্টারভিউ নিয়েছেন। ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে শনাক্ত করেছেন। কিন্তু কোন যুগ্ম সচিব তার ইন্টারভিউ নিয়ে শনাক্ত করেছেন তার নাম ও পদবি তিনি বলতে পারেননি। সূত্র মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায়ও শহিদুর রহমানের নাম নেই। তার এলাকার লোকজন তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চেনেন না। সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপটেন (অব.) তাজুল ইসলাম শহিদুর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করেননি। অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট এবং প্রত্যায়নপত্রের সঙ্গে তার দাখিলকৃত কাগজপত্রের মিল নেই। এসব পয়েন্টে প্রশ্ন করা হলে শহিদুর রহমান এড়িয়ে যান। সূত্র মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার ১৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য যাচাই করা হয়। তাতে ১২৮ জনের বিষয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ দাবির সপক্ষে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তথ্য না পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৯ নম্বরে ছিলেন শহিদুর রহমান। তার নামের পাশে ‘মন্তব্য’ কলামে বলা হয়, ‘তথ্য না থাকায় যাচাই করা গেল না। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিবার্তায় (লাল বই) শহিদুর রহমানের নাম নেই। তা সত্ত্বেও তিনি ভুয়া সনদ দাখিল করেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বর্ধিত মেয়াদে চাকরি শুরু করেন।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েই তিনি অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। অনুসন্ধান কর্মকর্তা শহিদুর রহমানের উদ্দেশে বলেন, আপনি দুদককে থ্রেট করেছেন। তলবি নোটিশ পাঠালে আপনি সেটি আমলে নেননি। বরং কিছু জানতে হলে আপনার দফতরে গিয়ে জানতে হবে বলেছেন। ২০ নভেম্বর হাজির হওয়ার জন্য ১৬ নভেম্বর আপনাকে তলবি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। আপনি একদিন আগে ১৯ নভেম্বর পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে জানান, ২৬ নভেম্বর বিকাল ৩টায় আসবেন। এভাবে সময় নির্ধারণ করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? জবাবে শহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আসলে এভাবে দেখলে হবে না। এতে যদি অনুসন্ধানের ব্যত্যয় ঘটে তাহলে আমি দুঃখিত।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল ৫টায় দুদক ত্যাগ করেন শহিদুর রহমান। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন। আমি জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযোদ্ধা সনদ ইস্যুর আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা কাগজপত্র যাচাই করেছেন, ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন-এসব জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই মুহূর্তে নামটি আমি মনে করতে পারিনি। আমাকে ২-৩টি পত্রিকা রাজাকারের ছেলে বলে উল্লেখ করেছে। এ কারণেই হয়তো দুদক ডেকেছে। প্রশ্নের জবাবে পাউবোর সাবেক এ ডিজি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ১৯৭৭ সালে যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছি তখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। গত বছর অক্টোবরে দুদক একটি অনুসন্ধান নথিভুক্ত করে আমাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এখন আবার একটি বেনামি চিঠির ওপর ভিত্তি করে আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

No comments

Powered by Blogger.