হ্যাটট্রিক জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

খরাজর্জর বছরের শেষ ভাগে এসে সাফল্যের দু’কুল প্লাবিত জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের কাজটা চট্টগ্রামেই এগিয়ে রেখেছিল টাইগাররা। কাল মিরপুরে তৃতীয় ওয়ানডেটা হল আরও একপেশে। জিম্বাবুয়েকে ১২৪ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ে জাতীয় দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মাশরাফির বলে ওপেনার ভুসি সিবান্দা আউট হওয়ার পর তাকে দেখতে খুবই অসহায় লাগছিল। জিম্বাবুয়ের এই ওপেনারই তো আগেরদিন সিরিজে ফেরার ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন! সফরকারীদের অসহায় আত্মসমর্পণ কাল সিবান্দাকে দিয়েই শুরু হয়েছিল। অথচ বছরজুড়েই জিম্বাবুয়ের মতো অসহায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই শনির বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে টাইগাররা। কাল তৃতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে হেরেছে ১২৪ রানে। রানের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। টানা তিন জয়ে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির এই প্রথম সিরিজ জয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি অষ্টম সিরিজ জয়।
ব্যাটিংয়ের শুরুতে এনামুল হক (৯৫) ও তামিম ইকবাল বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। এরপর সাকিব-মুশফিক-সাব্বিরে ২৯৭ রান করে স্বাগতিকরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে মাত্র ১৭৩ রানে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দাকে তুলে নিয়ে শুরুটা করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। জয়ের পথে তুলির শেষ আঁচড়টা দিলেন স্পিনার আরাফাত সানি চার উইকেট নিয়ে।
বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে জিম্বাবুয়েকে ৫-০-তে হোয়াইটওয়াশ করা। এই সিরিজটা মাশরাফি মুর্তজার জন্য অনেক প্রাপ্তির সিরিজ। এ সিরিজ দিয়েই আবার অধিনায়ক হিসেবে ফিরেছেন তিনি। দুর্দান্ত বোলিংয়ের সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবেও পেলেন টানা তিন জয়। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে কখনোই জয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। মাত্র ৩৯ রানেই তিন উইকেট হারায় সফরকারীরা। জিম্বাবুয়ে আফসোস করতে পারে শুধু মাসাকাদজার আউট নিয়েই। মাশরাফির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেয়া মাসাকাদজা আসলে আউট ছিলেন না। কারণ বল তার ব্যাট স্পর্শ করেনি। বাংলাদেশ একটি পরিবর্তন নিয়েই মাঠে নেমেছিল। তবে আল-আমিনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া শফিউল থেকেও ছিলেন না। নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বল করার পরই পায়ে ব্যথা পান। এরপর মাঠ থেকেও বেরিয়ে যান। মিরপুরে মাশরাফির দেখনো পথেই জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়েছেন স্পিনাররা। আরাফাত কামুনগোজিকে ফেরানোর সঙ্গেই ১৭৩ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ একটি করে উইকেট পান। দুটি উইকেট নেন পেসার রুবেল হোসেন।
সবার ধারণা ছিল, সিরিজে টস বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ টস জিতে নিয়েছিল ব্যাটিং। কাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ে টস জিতে নিল ফিল্ডিং। বাংলাদেশকে অবশ্য মুদ্রা নিক্ষেপের পর সিদ্ধান্ত নেয়ার পরীক্ষায় নামতে হয়নি। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টায় সফল স্বাগতিকরা। আগের দিন অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ওপেনিংয়ে যেন তামিম-এনামুল বড় জুটি গড়ে। এরপর সাকিব-মুশফিককে বেশি বল খেলার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’ তৃতীয় ওয়ানডেতে সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল। এই প্রথম টানা দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে একশ’র বেশি রানের জুটি হল। এরপর সাকিব ও মুশফিকের ৪৮ বলে ৭২ রানের জুটিতে ছয় উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। ২৫.৫ ওভারে এনামুুল হক ও তামিম ইকবাল যোগ করেন ১২১ রান। নিজের চার হাজার রান ছোঁয়ার পথ তখনও বেশ দূরে। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরে থাকতে রানআউটের শিকার হলেন তামিম। চার হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে তার প্রয়োজন আরও ৫৫ রান। এনামুল হক ডিপ মিড-উইকেটে ঠেলে দিয়েই একটি রান নেন। তামিম দুই রান নেয়ার জন্য এনামুলকে ডাক দেন। হঠাৎ বাধা পেয়ে ব্যাট উইকেটের সীমানায় পৌঁছানোর আগেই হাত থেকে পড়ে যায়। পা শূন্যে থাকায় থার্ড আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন আউট। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে ৩৯ রান যোগ করেন এনামুল। মুমিনুল ১৫ রানে মাসাকাদজার শিকারে পরিণত হন। দুর্দান্ত একটি ইনিংসের পথে সেঞ্চুরি মিস করেন এনামুল হক। ১২০ বলে নয় চারে ৯৫ রানে আউট হন তিনি। দলের স্কোর তখন ১৬৭/৩।
এনামুল আউট হওয়ার পর পরিকল্পনামতোই সাকিব ও মুশফিককে উপরে ব্যাটিংয়ে নামানো হয়। এই জুটি থেকে ৮ ওভারে আসে ৭২ রান। এর মধ্যে তিন ওভারে করেন ৪৫ রান। সাকিব ৪৪ রানে পানইয়ানগারাকে পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েন। ৩৩ বলে তিনি করেন ৪৪। চার হাজারি ক্লাবের সদস্য হওয়া থেকে সাকিব এখন ২৪ রান দূরে। মুশফিক ২২ বলে তিন চার ও এক ছয়ে করেন ৩৩ রান। শেষদিকে সাব্বির রহমানের ঝড়ো ইনিংস ও মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৩৩ রানেই তিনশ’ ছুঁই ছুঁই ইনিংস গড়ে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। জিম্বাবুয়ের পানইয়ানগারাই ৫৪ রানে দুটি উইকেট নেন। মাদজিভা, কামুনগোজি ও মাসাকাদজা একটি করে উইকেট পান।
শুভেচ্ছা : বাংলাদেশের সাফল্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.