লাখ ডলারে আনা হচ্ছে সংসদের মূল নকশা by কাজী সোহাগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের ৬ মাস পার হলেও সংসদ ভবনের মূল নকশা সংগ্রহ করতে পারেনি সংসদ সচিবালয়। তবে এখন ওই নকশা সংগ্রহে উঠেপড়ে লেগেছেন সংশ্লিষ্টরা। টাকার অভাবে এতদিন মূল নকশা পায়নি বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে টাকার সমস্যার সমাধান হয়েছে। এরপরই নব উদ্যমে নামেন তারা। এ প্রসঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আশরাফুল মকবুল মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেয়ার পর লুই ইসাডোর কানের ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা প্রায় ৮৫ হাজার ডলার বকেয়া রয়েছে বলে দাবি করেন। বিপুল অংকের টাকার কথা শোনার পরই উদ্যোগ থেমে যায়। পরে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির অগ্রগতি জানতে চাইলে টাকার অভাবের কথা বলা হয়। কারণ সংসদ সচিবালয়ের বাজেটে এত টাকা নেই। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা দেয়ার আশ্বাস দেন। তারপরও মূল নকশা আনার নির্দেশ দেন তিনি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সংসদ সচিব স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান ও গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করেন। সেখানে মূল নকশা সংগ্রহের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। এদিকে ওই নকশা সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল লুই কানের প্রতিষ্ঠানে যাবে। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল নকশা আনতে বাংলাদেশের খরচ হবে প্রায় এক লাখ ডলার। এর পুরোটাই বহন করা হবে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, টাকার লেনদেন নিয়ে এর আগে লুই কানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় বাংলাদেশ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নকশার জন্য চুক্তি করা টাকা পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ। এতে বঞ্চিত করা হয় লুই কানকে। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, লুই কান পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করেননি। তিনি ৮০ ভাগ নকশা চূড়ান্ত করেন। যে পরিমাণ জমির ওপর নকশা তৈরির কথা তা শেষ করতে পারেননি লুই কান। এজন্য পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এদিকে গতকালের বৈঠকে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে স্থাপত্য অধিদপ্তরকে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল নকশা সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়। এজন্য আগামী জুন মাস পর্যন্ত আনুমানিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছরের জুনে সংসদ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জুনের বৈঠকের আগেই মূল নকশা আনতে চায় বাংলাদেশ। বৈঠক শেষে সংসদ সচিব আশরাফুল মকবুল মানবজমিনকে বলেন, স্থাপত্য অধিদপ্তর শিগগিরই লুই কানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তাদের দাবি ছিল ৮৫ লাখ ডলার। আমরা চেষ্টা করব ওই টাকায় মূল নকশা সংগ্রহ করতে। মূল নকশা না থাকায় এর আগে সংসদ ভবনে নকশা বহির্ভূত নানা স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রতিবারই তা বিতর্কিত হয়। এমনকি মামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগে মূল নকশা সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, প্রয়োজনের তাগিদে সংসদ ভবনের ভেতরে কাচ ও কাঠের বিভাজন দিয়ে অসংখ্য কক্ষ তৈরি করা হয়। নকশা অমান্য করে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি বানানো হয়। লুই কান প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে ভবনটি নকশা করেছেন। ভবনের ছাদে কাচের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বাতাস ও সূর্যের আলো যাতে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য প্রতি ব্লকের চার ভাগের এক ভাগ খালি রাখা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক আলো ছাড়াই দিনের বেলায় কাজ করা যায়। বর্তমানে সংসদ ভবনে বৈদ্যুতিক আলো ছাড়া কাজ করার সুযোগ নেই। কারণ, আলো ও বাতাস ঢোকার বেশির ভাগ পথ সংসদ সচিবালয় বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে। গণপূর্ত বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, লুই কানের নকশায় ভবনের কক্ষের সংখ্যা থাকার কথা চারশ। কিন্তু এখন আছে পাঁচ শ’রও বেশি। সংসদ সচিবালয় বড় কক্ষগুলোতে কাঠের বিভাজন দিয়ে অসংখ্য ছোট ছোট কক্ষ তৈরি করেছে। এই ভবনে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলেও নকশাবহির্ভূত এসব কক্ষের জানালার পাশে আলাদা শীতাতপ যন্ত্র লাগানো হয়েছে। এটা করতে গিয়ে অনেকগুলো জানালা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.