মেয়র আরিফকে জড়ানোর প্রতিবাদে সিলেট উত্তাল

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে জড়ানোর প্রতিবাদে সিলেট উত্তাল হয়ে উঠেছে। প্রতিবাদে আজ পূর্ণদিবস হরতাল ডাকা হয়েছে সিলেটে। তবে জেএসসি পরীক্ষা হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। রোববার নগরীতে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচির পাশপাশি আজ সোমবার ‘আমরা সিলেটবাসী’র উদ্যোগে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। এদিকে গত ৩ দিন ধরে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাকে গ্রেফতারে ঢাকা থেকে স্পেশাল টিম পাঠানো হয়েছে বলেও গুজব রটেছে। বিএনপির সমাবেশ থেকে আজকের হরতালে পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করে নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাবেশে সিলেটের উন্নয়ন ব্যাহত ও বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে অপচেষ্টা চলছে মেয়র আরিফকে ফাঁসানোর। এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা ঘোষণা করেছেন পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি। রোববার দুপুরে সিলেট সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্সিলররা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ‘আমরা সিলেটবাসী’র ডাকা আজকের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নৈতিক সমর্থনও জানিয়েছেন কাউন্সিলররা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, গণসংযোগ, সিলেট নগরের সব শ্রেণী-পেশার সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মতবিনিময় ও গণস্বাক্ষর, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সব কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতীকী কর্মবিরতি, সিলেটের সর্বস্থরের সচেতন জনগণের মানববন্ধন, অন্ধকারে আলোর মিছিল, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে স্মারকলিপি এবং নগরভবন প্রাঙ্গণে গণসমাবেশ ও সমাবেশ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে বলে জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কোনোভাবেই জড়িত থাকতে পারেন না। ঘটনার প্রায় এক যুগে লোকমুখে অনেকের নাম উচ্চারিত হলেও কখনও আরিফুল হকের নাম শোনা যায়নি। তিনি জড়িত থাকতে পারেন এমন কল্পনাও কেউ করেননি। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে যাদের গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে, যারা সিলেট নগরীকে ভুতুড়ে দেখতে চায়, সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি করে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়, সেই বিদ্বেষী মহলই পরশ্রীকাতর হয়ে নোংরা খেলা খেলতে গিয়ে মেয়র আরিফকে হয়রানি করছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই শ্রদ্ধেয় কিবরিয়ার আসল খুনি ও দোষীদের আড়াল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, প্রখ্যাত কূটনীতিবিদ, জাতির গর্বিত সন্তান, সিলেটবাসীর অহংকার, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার আজ জাতীয় দাবি। কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে এ হত্যার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা সন্দেহ, জটিলতা ও বিতর্ক। ইতিমধ্যে দু’দফা অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়েছে। তৃতীয় দফা দাখিলকৃত অভিযোগপত্র সম্পর্কেও কিবরিয়া পরিবারের কেউই অবগত নন। তৃতীয় দফা দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে জননন্দিত সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। বক্তব্যে বলা হয়, নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ২৭টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ৯ জন মহিলা কাউন্সিলর সমন্বয়ে পরিচালিত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব, নগরবাসীর লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত, সব উন্নয়ন কার্যক্রমের রূপকার এবং তা বাস্তবায়নে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সব ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত থেকে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী হচ্ছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জননন্দিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট সিটিকে বিশ্বমান উপযোগী একটি আধুনিক নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাকে হয়রানি করতে গ্রহণ করা হয়েছে বিনা মেঘে বজ পাতের মত হিংস্র উদ্যোগ। ঘটনার ১০ বছর পর হঠাৎ করে তাকে কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট ছালেহ আহমদ চৌধুরী, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, দিনার খান হাসু, রেজওয়ান আহমদ, সিকান্দর আলী, আবদুল জলিল নজরুল, মো. রাজিক মিয়া, এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, আবদুল মুহিত জাবেদ, সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মোহাম্মদ ছয়ফুল আমিন বাকের, মো. আবদুর রকিব তুহিন, সোহেল আহমদ রিপন, দেলোয়ার হোসেন সজীব, তাকবির ইসলাম পিন্টু, নজরুল ইসলাম মুনিম, অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ, সালেহা কবীর শেপী, আমেনা বেগম রুমি, কুহিনুর ইয়াসমীন ঝর্ণা, রেবেকা বেগম রেনু ও দিবা রানী দে বাবলী। এদিকে, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে ‘আমরা সিলেটবাসী’র ডাকা আজকের হরতালের আওতামুক্ত থাকবে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের বহনকারী যানবাহন। ‘আমরা সিলেটবাসী’ সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে, আজকের হরতালে নাশকতা মোকাবিলায় খক্ষহস্ত স্থানীয় প্রশাসন। এসএমপির মিডিয়া কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, চার্জশিট আদালতের বিচার্য বিষয়। এ নিয়ে রাস্তাঘাটে কোনো প্রকার বিশৃংখলা, অরাজকতা, নাশকতা সহ্য করা হবে না।

No comments

Powered by Blogger.