বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ছে

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। নতুন বছরের শুরুতে গ্রাহকদের জন্য মূল্য বৃদ্ধির এ ঘোষণা আসছে। আবাসিক বাণিজ্যিকসহ সব খাতেই গ্যাসের দাম বাড়বে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে পাইকারি পর্যায়ে বাড়লে গ্রাহক পর্যায়েও মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে। কারণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে সরবরাহ করলে কোম্পানিগুলোর লোকসান বাড়বে। ক্ষতি কমাতে হয় দাম বাড়াতে হবে না হয় সরকারকে বাড়তি অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিতে হবে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এ উদ্যোগ সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। কৃষি, শিল্পের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। নিত্যপণ্যের দাম আরও এক ধাপ বাড়বে। এতে জনগণের বিশেষ করে নিু ও মধ্যবিত্তের জীবন নির্বাহের ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে উঠবে।
পেট্রোবাংলার অধীনস্থ ৬টি কোম্পানি রোববার সব ধরনের গ্যাসের দাম ১১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত মাসে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ১৮.১২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। উভয় ক্ষেত্রে জানুয়ারি থেকে দাম বৃদ্ধি কার্যকরে আবেদন করা হয়েছে।প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে ডিসেম্বরে গণশুনানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য সেলিম মাহমুদ। এরপর মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হবে, যা আগামী জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ছে : বিইআরসি সূত্র জানায়, সব কোম্পানি একই হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন বলে যুক্তি দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্র্রিবিউশন কোম্পানি লি., বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি পৃথক প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানিগুলো ১ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের নতুন দাম কার্যকর করার আবেদন করেছে।আবাসিক খাতে এক চুলার গ্যাসের দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা এবং দুই চুলা ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবাসিকে মিটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার ঘনফুট ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা বা ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘনফুট) ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ২৬৮ টাকা ০৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, শিল্প গ্রাহকদের জন্য ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা, চা শিল্পে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা এবং সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।এছাড়াও প্রস্তাবে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের গ্যাসের পাইকারি দাম প্রতি হাজার ঘনফুটে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণের প্রতি হাজার ঘনফুট ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর আগে ৩০ অক্টোবর সব বিতরণ কোম্পানির পক্ষে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাব আইন অনুসারে যথাযথ হয়নি উল্লেখ করে কমিশন তা গ্রহণ করেনি। ফেব্র“য়ারি মাসে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন চাওয়া হয়। ওই সময় তারা একটি প্রাথমিক প্রস্তাবও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দেন। এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালে নির্বাহী আদেশে করা হয়। এরপর সিএনজির মূল্য কয়েক ধাপে সমন্বয় করা হলেও শিল্প, আবাসিক ও অন্যান্য খাতের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।বাড়ছে বিদ্যুতের দাম : অক্টোবরে পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় বিইআরসিতে। প্রতি ইউনিটের দাম (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) ০.৮১ টাকা করার জন্য কমিশনের কাছে সুপারিশ করে পিডিবি। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ইউনিটপ্রতি ৪.৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৫.৫১ টাকা হবে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত হার কার্যকর করার সুপারিশ করেছে পিডিবি।পিডিবির হিসাবনুযায়ী এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৬.৫৪ টাকা। এতে প্রতি ইউনিটে পিডিবির লোকসান হচ্ছে ১.৮৪ টাকা। তাই দাম বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

No comments

Powered by Blogger.