কী ছিল সেই ডকুমেন্টসে?

কী ছিল সেই ডকুমেন্টসে? যা পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়িয়েছিলেন যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান। কী এমন দুর্নীতির নথিপত্র হাতে পেয়েছিলেন পুত্রবধূ ডা. শামারুখ মাহজাবীন, যা তার কাছ থেকে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন টিপু সুলতান। এসব প্রশ্ন ডা. শামারুখের পরিবারের সদস্যদের। ডকুমেন্টস পাওয়ার পর স্যুটকেসে লুকিয়ে রেখেছিলেন ডা. শামারুখ। এ খবর শামারুখ তার বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলামকে ফোনে জানিয়েছিলেন। নুরুল ইসলাম বলেন, ১১ নভেম্বর ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে শামারুখ শ্বশুর টিপু সুলতানের ঘরে সেগুলো পেয়েছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে যান টিপু। এর দুদিন পরই ওই বাসায় লাশ হতে হয়েছে ডা. শামারুখকে।ডা. শামারুখ মাহজাবীন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সু®ু¤ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে শামারুখের শাশুড়ি প্রফেসর ডা. জেসমিন আরাকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবিও জানানো হয়। মাহজাবীন হত্যার ঘটনায় স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই মামলায় হুমায়ুনের বাবা খান টিপু সুলতান ও মা ডা. জেসমিন আরা রোববার উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।ডা. শামারুখ হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এই কলেজের শিক্ষক, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তার অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। শামারুখ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার তারা। এ দাবিতে রোববার দুপুর ১২টায় হলি ফ্যামিলি কলেজের সামনে তারা মানববন্ধন করেন। এতে তার স্বজনরাও অংশ নেন।শামারুখের মামা কাজী ফিরোজুর রহমান বলেন, ‘খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী ডা. জেসমিন প্রভাবশালী। শামারুখকে হত্যার পরপরই তারা নানা নাটক শুরু করে। হাসপাতালে লাশের পাশে তাদের কেউ ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘তাকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাল্টানোর চেষ্টা করে টিপু সুলতান। আমরা সঠিক রিপোর্ট চাই। কোনো ছলচাতুরি যেন না করা হয়। তার শরীরে হত্যার অনেক প্রমাণ রয়েছে।’কলেজের শিক্ষক নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শোয়েব আলম বলেন, ‘শামারুখের মতো মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মতো আর কোনো মেয়ে যেন হত্যার শিকার না হয়। তার মৃত্যুর সঠিক বিচার প্রত্যাশা করি।’ ডা. শামারুখের সহপাঠী ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, ‘হাসপাতালে শামারুখের শরীরে হত্যার অনেক আলামত আমরা দেখেছি। এই হত্যা যেন সুইসাইড বলে চালানো না হয়।সহকর্মী ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘ওর (শামারুখ) শাশুড়ি ওকে নাইট ডিউটি করতে দিত না। ডা. সেঁজুতি জানান, একটু রাউন্ড দেয়ার পরই শাশুড়ি ডা. জেসমিন তাকে বাসায় নিয়ে চলে যেত। ডা. সাব্বির বলেন, শামারুখ ছিল পরোপকারী মানুষ। তার মাধ্যমে বহু দরিদ্র রোগী রক্ত পেয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে টোকাই ছেলেমেয়েদের পড়াতেন শামারুখ। শামারুখের শাশুড়ি ডা. জেসমিনকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে। প্রায় এক ঘণ্টা চলা এই মানববন্ধনে কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া ছিলেন না। তিনি বলেন, কলেজের কাজে আমি ব্যস্ত ছিলাম। তবে মানববন্ধনে আমার সমর্থন রয়েছে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কলেজে দুপুরে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান তিনি।কাজী ফিরোজুর রহমান জানান, টিপু সুলতান খুবই লোভী প্রকৃতির। পুত্রবধূর (শামারুখ) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে সে খবরও সে নিত। ১০ লাখ টাকা আছে সংবাদ পেয়ে ওই টাকা ব্যাংক থেকে উঠানোর জন্যও বলেছিল টিপু সুলতান। ছেলের বিয়ের সময় ও পরে অনেক যৌতুক নিয়েছে সে। শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শামারুখ আমাকে ফোনে বলেছিল, আব্বু আমার শ্বশুরের দুর্নীতির অনেক ডকুমেন্টস পেয়েছি। সেগুলো আমার স্যুটকেসে রেখেছি। সবকিছু ফোনে বলা যাবে না।’বৃহস্পতিবার দুপুরে ডা. শামারুখ মাহজাবীনকে ধানমণ্ডি টিপু সুলতানের বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে টিপু সুলতান, ডা. জেসমিন ও হুমায়ুন সুলতানের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। ওইদিনই স্বামী হুমায়ুন সুলতানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। রোববার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আনোয়ার সাদত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন তার আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।ধানমণ্ডি থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক যুগান্তরকে জানান, হুমায়ুনকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন। কাল (আজ সোমবার) তাকে থানায় নেয়া হবে।আগাম জামিন : পুত্রবধূ ডা. শামারুখ মাহজাবীন হত্যা মামলায় আগাম জামিন পেলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী জেসমিন আরা। রোববার হাইকোর্টে আÍসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনের আবেদন করেন তারা। বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আবেদনের শুনানি শেষে চার সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।আদালতে এই দম্পতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি ও ফজলুল হক খান ফরিদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশিরউল্লাহ।আসামিপক্ষের আইনজীবী ফজলুল হক খান ফরিদ আদালতের আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগাম জামিন পেয়েছি। আদালত আমাদের আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন।’ এই দম্পতির আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘এটা একটা আত্মহত্যার মামলা। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এজাহারে নেই।’ টিপু সুলতান আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য এবং ডা. জেসমিন একজন অধ্যাপক জানিয়ে ফজলুল হক আদালতকে বলেন, এ মামলায় তারা আগাম জামিন পেতে পারেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।জানতে চাওয়া হলে ড. বশিরউল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে। আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন। পাশাপাশি যখন আত্মসমর্পণ করবেন তখন তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য বলেছেন।

No comments

Powered by Blogger.