পুলিশের হাতে আসছে আধুনিক অস্ত্র by দীন ইসলাম

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন বিভিন্ন ক্যালিবারের পিস্তল, রিভলবারসহ নানা অস্ত্র। এসব অস্ত্রের বদলে পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে আসছে আধুনিক অস্ত্র। এ জন্য অস্ত্র প্রাধিকার নীতিমালায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। সাত ঘর বিশিষ্ট ছক অনুযায়ী নীতিমালার বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সহসাই চূড়ান্ত প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে পুলিশ সদর দপ্তর। এরপর প্রস্তাবিত অস্ত্র প্রাধিকার নীতিমালাটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যাচাই বাছাই করার জন্য পাঠানো হবে। গত ২৬শে অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) আখতার হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, পিবিআই, নৌ-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সোয়াট ও গোয়েন্দা বিভাগের কথা মাথায় রেখেই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছে। আধুনিক অস্ত্র যোগ করার বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার মনে করে, দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের ধরনও পাল্টে গেছে। এখন সন্ত্রাসীরা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বড় ধরনের অভিযান চালাতে গিয়ে উন্নতমানের অস্ত্র না থাকায় অপরাধীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতেও পুলিশের তেমন কোন অস্ত্র নেই। বিরোধী দলের যে কোন আন্দোলন চলার সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে পুলিশকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালায়। তখনও দেখা যায়, অস্ত্র না থাকায় দুর্বৃত্তদের ধরতে পারে না আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সভায় পুলিশের ডিআইজি মো. আবুল কাশেম বলেন, বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৭.৬২ মি.মি পিস্তল ব্যবহার করে থাকে। আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মেট্রোপলিটন এলাকা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যালিবারের পিস্তল ও রিভলবার ব্যবহার করে থাকে। প্রতিটি অস্ত্র প্রস্তুতকারকও ভিন্ন ভিন্ন ক্যালিবারের অস্ত্র তৈরি করে থাকে। আমাদের অস্ত্র নীতিমালায় বিভিন্ন ক্যালিবারের অস্ত্র থাকলে ক্রয় প্রক্রিয়াতে অস্ত্রের মডেল, ক্যালিবার, মূল্য, সুনাম, ব্যবহার সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে পছন্দের অস্ত্রটি নেয়ার সুযোগ থাকে। পরে অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনের আলোকে অস্ত্রের মডেল বা ক্যালিবার পরিবর্তন করার সুযোগ তৈরি হয়। একই সভায় পুলিশের এআইজি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, এদেশে পার্বত্য অঞ্চল ও সমতল অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পুলিশের বিভিন্ন মডেল ও ক্যালিবারের অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে।  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অস্ত্র সংক্রান্ত বর্তমান প্রাধিকার নীতিমালায় যেসব ত্রুটি বা বিচ্যুতি রয়েছে তা দূরীকরণসহ আধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র প্রাধিকার নীতিমালা তৈরির জন্য ২০১২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি পাঁচটি সভা করেছে। এসব সভায় বর্তমান প্রাধিকার নীতিমালায় যেসব ত্রুটি বা বিচ্যুতি রয়েছে তা দূরীকরণসহ আধুনিক ও মানসম্পন্ন অস্ত্র প্রাধিকার নীতিমালা তৈরির জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ১৯৮৯ সালের ২৬শে ডিসেম্বর সেনাবাহিনী প্রধানের মনোনীত প্রতিনিধিকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের কমিটি বাংলাদেশ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর জন্য অস্ত্র নীতিমালা তৈরি করে। ১৯৯২ সালের ১৪ই জানুয়ারি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক নীতিমালাটি অনুমোদিত হয়। এরপর সময়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে ওই নীতিমালা ২০০০ ও ২০০৫ সালে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। এসব নীতিমালায় কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন রয়েছে কিনা এনিয়ে সভায় আলোচিত হয়। এরপর নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিদ্যমান অস্ত্র নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে ছক অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রস্তাবনা পুলিশ সদর দপ্তর পাঠাবে। ওই প্রস্তাবনায় থাকবে ১৯৯২ সালে প্রণীত নীতিমালা, ২০০০ সালের সংশোধনী, ২০০৫ সালের সংশোধনী, ২০০৮ সালের ক্ষুদ্রাস্ত্র বাছাই বা নির্বাচন পর্ষদের সিদ্ধান্ত, বর্তমান কমিটির বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত এবং চূড়ান্ত প্রস্তাবনা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এখনও প্রস্তাবনা পাঠায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। প্রস্তাব পাওয়ার পরই চূড়ান্ত কাজ শুরু করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

No comments

Powered by Blogger.