এসআই জাহিদের বান্ধবী নিয়ে রাতযাপন : অস্ত্র ৯ দিনেও উদ্ধার হয়নি

পাবনা সদর থানার দারোগা এসআই মো: জাহিদুল ইসলাম কথিত বান্ধবীকে নিয়ে রাত্রিযাপন করতে গিয়ে আট রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগজিনসহ সরকারী অস্ত্র খোয়ানোর ৯ দিন পার হলেও এখনো তা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বত্র ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে। দোকানপাট, চায়ের দোকান, রেলষ্টেশনসহ সকলের মুখে এসআই জাহিদের পরকীয়া প্রেম ও সরকারি অস্ত্র খোয়ানোর ঘটনা। একইভাবে জাহিদ, তার কথিত প্রেমিক ও যে বাসাতে এ ঘটনা তার মালিক হেলথ ভিজিটর সাজেদা খাতুন রিনার জীবন কাহিনী নিয়েও নানা তথ্য বেড়িয়ে আসছে। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বরখাস্তকৃত এসআই জাহিদুল ইসলাম বিবাহিত এবং ২ সন্তানের জনক। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। সিরাজগঞ্জে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিরাজগঞ্জ জেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিসের হেলথ ভিজিটর ফরিদা খাতুনের (৩৫) সঙ্গে তার পরিণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর আগে তারা প্রায়ই মিলিত হতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসআই জাহিদুল পাবনা সদরে বদলি হয়ে এলে পাবনায় তারা ওই বাসায় মিলিত হতেন। এরই ধারবাহিকতায় গত ২৭ অক্টোবর পাবনা শহরের শালগাড়িয়া টিবি হাসপাতালের পিছনের হেলথ ভিজিটর সাজেদা খাতুন রিনার বাসায় রাত যাপন করেন। এরই একপর্যায়ে ৮ রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগজিনসহ জাহিদুলের পিস্তলটি খোয়া যায়। ঘটনার দুই দিন পর ২৯ অক্টোবর বুধবার থানায় অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ বাড়ি ওয়ালার ছেলে এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসী কাজী সালাউদ্দিন সুজন (২৮) ও কথিত বান্ধবী ফরিদাকে (২৫) আটক করে থানায় দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এসআই জাহিদুলের কথিত বান্ধবী ফরিদা ইয়াসমিন সিরাজগঞ্জ শহরের সোনালী ব্যাংকের অফিসার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত সাজেদা খাতুন রিনার বাসায় প্রায়ই অসামাজিক কাজ হয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার সকল সমাজবিরোধী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা রাতে ওই বাড়িতে আড্ডা দেন। কোনো কোনো পুলিশ অফিসার ওই বাড়িতে রাত কাটায় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকে জানায়। এর আগে ওই রিনা খাতুনের বেশ কয়েকটি বিয়ে হয়। কিন্তু নানা কারণে কোনটিই টেকেনি। সর্বশেষ তার বর্তমান স্বামী ফরিদপুরে নদী গবেষণা অফিসে কর্মরত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। রিনার ছেলে কাজী সালাউদ্দিন ওরফে সুজন চিহিৃত সন্ত্রাসী। সে হত্যা, চাঁদাবাজী, নারী নির্যাতনসহ বহু মামলার আসামি বলে থানার রেকর্ড থেকে জানা যায়।
পাবনা শহরের শালগাড়িয়া এলাকার কয়েকজন কথিত গডফাদারের আশ্রয় প্রশয়ে সুজন ও তার মা রিনা এ সব অপকর্ম করতেন বলে পুলিশ জানায়। পাবনা থানার এসআই নাজমুল সাংবাদিকদের জানান, একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন উঠতি নেতা ওই বাড়িতে অসামাজিক কাজ করতেন। সুজনের মাধ্যমে তাদের হাতে এই অস্ত্রটি চলে যেতে পারে। এ ছাড়া ওই সব নেতাদের নির্দেশে সুজন এর আগে বেশ কয়েকটি অপকর্ম করে বলে পুলিশ জানায়। গ্রেফতারকৃত কাজী সালাউদ্দিন সুজনের মা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত সাজেদা খাতুন রিনা বলেন, ‘একই বিভাগে চাকরি করার সুবাদে সিরাজগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে ৫ বছর পূর্বে আমার পরিচয় হয়। ২৭ অক্টোবর সোমবার রাত ৯টার দিকে স্বামীসহ ফরিদা আমার বাসায় আসে এবং তারা দুজন একসঙ্গে রাত কাটায়। সকালে ফরিদার স্বামী জানায় তার পিস্তল হারিয়ে গেছে।’
পাবনা সদর থানার এসআই জাহিদ অন্য নারীর সাথে রাত কাটানোর সময় অস্ত্র হারানোর বিষয়টি জানাজানি হলে শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এদিকে ৯ দিনেও পিস্তলটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ মামলার তদন্তকারী অফিসার ও পাবনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো: বদরূদ্দোজা জানান, এসআই জাহিদের কাছ থেকে আট রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগজিনসহ খোয়া যাওয়া সরকারি  অস্ত্রটি উদ্ধারের জোর চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.