বরিশাল- চার বছরেও কালভার্ট সরেনি

বরিশাল নগরের জেল খালের কালভার্ট ভেঙে আর সেতু নির্মাণ করা হয়নি। প্রায় চার বছর ধরে রয়েছে কালভার্টটি। অ্যাপ্রোচ সড়কও নির্মাণ করা হচ্ছে না। সেতু নির্মিত না হওয়ায় খালের বড় একটা অংশ দখল হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে রয়েছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

>>বরিশাল নগরের নাজির মহল্লায় জেল খালের ওপরের সেতু ভেঙে কালভার্ট নির্মাণ করায় দুই পাশের জায়গা দখল হয়ে গেছে। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঠের পুল হিসেবে পরিচিত জেল খালের নাজির মহল্লায় বক্স কালভার্টের দুই প্রান্তের সড়ক সংস্কার করা হয়নি। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দীর্ঘ সেতু ভেঙে সিটি করপোরেশন মাত্র ১৮ ফুট বক্স কালভার্ট নির্মাণ করায় খালের বাকি অংশ স্থাপনা উঠেছে, দখল হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর অনেকে জানান, ২০১০ সালে বরিশালের জেল খালের নাজির মহল্লা এলাকার সেতু ভেঙে কালভার্ট নির্মাণ করে বরিশাল সিটি করপোরেশন। এরপর ওই কালভার্ট ভেঙে সেতু নির্মাণের দাবি তোলে নগরবাসী। সেই অনুযায়ী ২০১১ সালে ওই এলাকায় এক সমাবেশে তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন নাকরিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কালভার্ট ভেঙে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রতির তিন বছর পার হয়েছে। কিন্তু সেতুও নির্মিত হচ্ছে না, দুর্ভোগ কমছে না। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, জেল খালের নাজির মহল্লা এলাকায় পূর্বে লোহার ও ঢালাই সেতু ছিল। পরে সেখানে সেতুর পরিবর্তে বক্স কালভার্ট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তাই বক্স কালভার্ট করা হয়। তা ছাড়া সেতু নির্মাণ করলে এর চেয়ে চার গুণ খরচ হতো। নাগরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই কালভার্ট ভেঙে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরে আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, উন্নয়নের নামে বরিশাল সিটি করপোরেশন খালের ওপর থাকা বড় সেতু ভেঙে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে। ৫০-৬০ ফুট চওড়া সেতু ভেঙে কালভার্ট করায় দুই পাশের খাল দখল হয়ে গেছে। এর প্রতিবাদ জানান বরিশালের নাগরিকেরা। ২০১১ সালে সিটি মেয়র এখানে এসে কালভার্ট ভেঙে সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেন। প্রায় চার বছর পার হলেও আর সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি এর পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের উন্নয়ন করা হয়নি। এতে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিখিল সেন প্রথম আলোকে বলেন, জেল খালের প্রশস্ততা ছিল ৭০ ফুট। দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বর্তমানে কীর্তনখোলা নদীর মোহনা থেকে শুরু করে সর্বত্র মাত্র ২৭ ফুট চওড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে জেল খালের নাজির মহল্লা এলাকার সেতুর পরিবর্তে বক্স কালভার্ট নির্মাণের কারণে প্রশস্ততা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৮ ফুট। এখানে খালের ওপর ১৬ ফুট উচ্চতায় সেতু নির্মিত ছিল। সেই সেতু ভেঙে পার্শ্ব সড়ক থেকে মাত্র দুই ফুট উঁচুতে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।
মো. আতিকুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন নগরের অবশিষ্ট খালটি ভরাটের জন্যই সেতু ভেঙে কালভার্ট নির্মাণ করে। বর্তমানে কালভার্টও সরে না, রাস্তাও ঠিক হয় না। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ নাগরিকেরা। কালভার্ট নির্মাণ করায় দুই পাশ থেকে অর্ধেক খাল দখল হয়ে গেছে।
বরিশাল নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই নগরের খাল ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। তার ওপর সিটি করপোরেশন বক্স কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে খাল ভরাট করেছে। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা অবিলম্বে দখল হওয়া খাল রক্ষায় সেতু নির্মাণের দাবি করছি।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, জেল খালের ওই স্থানে বক্স কালভার্ট করায় প্রশস্ততা একটু কমেছে। তবে উচ্চতা ঠিক আছে। ওই কারণে কিছুটা অংশ দখল হয়েছে। করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুই দিকে আরও পাঁচ ফুট করে দুটি (বেন্ট) খোলা স্থান বের করা হবে। সে জন্য দরপত্রের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। ওই কাজ করা হলে দখল মুক্ত করা সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.