জলে পেতেছেন শয্যা by দীপক আহমেদ

হামাগুঁড়ি দেয়া অবুজ শিশু নাছিমাকে যখন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তার খোঁজে বাড়ির মানুষ যখন পাগল প্রায়, তখন খবর আসে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে জলকেলীতে ব্যস্ত সে। ৪৩ বছর আগের সেই দৃশ্য শুধু নাছিমার বাড়ির মানুষকেই নয়, পাড়া-প্রতিবেশীদেরও অবাক করেছিল। দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল উপস্থিত সবার। সেদিন সেই অবুজ শিশু নাছিমাকে নিয়ে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। তাকে দেখতে মানুষের ভিড় বাড়ে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা সদরের চিকনমাটি গ্রামের পল্টন পাড়ায়। তাকে নিয়ে নানা কল্প কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। সেকি মানুষরূপী অন্যকিছু, নাকি দেবদেবী। হাঁটি হাঁটি পা পা করে শিশু নাছিমা কৈশোরে পা দেয়। সরকারি চাকুরে পিতা আরব আলী মেয়েকে সাঁতার শেখানোর জন্য কলাগাছের ভেলা বানিয়ে পুকুরের শান্ত জলে নামিয়ে দিতো। কি তাজ্জব ব্যাপার! নাছিমা পানিতে ভেসে আসে একাকী। ভেলা ছাড়াই কখনও চিৎ হয়ে কখনও উপুড় হয়ে কোন নড়াচড়া না করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুকুরের জলে ভেসে থাকছে নাছিমা। এভাবে দিন মাস বছর পেরিয়ে কেটে গেছে অনেকটা সময়। সেদিনের সেই নাছিমা আজ ৪৩ বছরে পড়েছে। তার কোলজুড়ে আসা ২ ছেলে আর ৩ মেয়ের সংসারেও এসেছে ৪ ছেলে মেয়ে। কিন্তু নাছিমা বেগম আজও পুকুরের জলে সাঁতার কাটেন। একাকী পুকুরের জলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুয়ে থাকেন। পুকুরের পানি কাঁপে না। পুকুরও জানে না কে আমার ওপর শয্যা পেতেছে। তার এই জলকেলি দেখতে আশপাশের গ্রামের এমনকি দূরদূরান্তের নানা বয়সী মানুষ প্রতিদিন আসেন। নাছিমাও কোন রাখঢাক না করেই বাড়ির পাশের পুকুরে চিৎ হয়ে ভেসে থাকার ম্যাজিক দেখান সবাইকে। এ নিয়ে নাছিমা জানান, তিনি নিজেও জানেন না কিভাবে পুকুরের গভীর জলে ভেসে থাকেন। তিনি একটানা সারাদিন পুকুরের পানিতে ভেসে থাকতে পারবেন বলেও জানান। আর এই ভেসে থাকাটাকে তিনি প্রকৃতির দান বলে মনে করেন। আর এই জলকেলীতে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তার ব্যবসায়ী স্বামী সেলিম রেজা।

No comments

Powered by Blogger.