বাঘের হুঙ্কার শুনছে জিম্বাবুয়ে by রাশিদুল ইসলাম

খুলনায় এসে এবার টাইগারদের আক্রমণের শিকার হবে জিম্বাবুয়ে। লাকি ভেন্যুতে সুন্দরবনের টাইগাররা জিতবেই। কোনভাবেই বাঘের থাবা থেকে রক্ষা পাবে না জিম্বাবুয়ে। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় টেস্ট দেখতে আসা দর্শকরা গ্যালারিতে বসে চিৎকার করে তাদের অনুভূতি এভাবে প্রকাশ করেন। একে অপরকে বলতে থাকেন ওরা বাঘ দেখেছে, কিন্তু হুঙ্কার তো শোনেনি। এবার বুঝতে পারবে বাঘের গর্জন কাকে বলে।
স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়: খুলনার আবু নাসের স্টেডিয়ামে কোন ওয়ানডে ম্যাচ হচ্ছে না। হচ্ছে পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু তাতে কি? দর্শকদের উপস্থিতি এতটুকুও কমতি ছিল না। গ্যালারি ছিল দর্শকে টইটমু্বর। তবে দর্শকদের অধিকাংশই ছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। কড়া রোদও দর্শকদের উল্লাস থামাতে পারেনি। কিন্তু মাত্র ৭ ওভারে দলীয় ৬ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২ রানে এলটন চিগুম্বরার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন শামসুর রহমান শুভ। শুভ আউট হলে গ্যালারিতে নীরবতা নেমে আসে। শুভর জায়গায় মোমিনুল হক ব্যাটিংয়ে নামলে বাংলাদেশের খেলায় ছন্দ ফিরে আসে। সেই সঙ্গে প্রাণ ফিরে পায় দর্শকরা।

গ্যালারিতে টাইগার: খুলনার মাঠে খেলা হচ্ছে, আর এই স্টেডিয়ামে বাঘ থাকবে না, তা কি করে হয়! খুলনার সুন্দরবন তো বাঘের কারণেই বিশ্ববিখ্যাত। সুন্দরবনে বিচরণ করছে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই সুন্দরবন থেকে মাত্র কিছু দূরে অবস্থান খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম। সে কারণে দর্শকরা জীবন্ত বাঘ না আনতে পারলেও ‘হাতে তৈরি বাঘ’ আনতে মোটেও ভুল করেনি। এই তৈরি বাঘও ছিল শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি। যা খেলা দেখার পাশাপাশি দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। এই তৈরি বাঘ নিয়ে কড়া রোদ উপেক্ষা করে খেলা দেখেছে খুলনা পাবলিক কলেজের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র শাদমান। তার মাথায় ছিল জাতীয় পতাকা সংবলিত স্টিকার ও দু’ গালে ছিল বাঘের প্রতিকৃতি। শুধু শিশু শাদমানই নয়, রাজধানীর মালিবাগ আর ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা থেকে খেলা দেখতে এসেছেন ফাহিমুল হক টাইগার মিলন ও মেহের আলী। সারা শরীরে বাঘের ছবি অঙ্কিত অবস্থায় খেলা দেখেছেন তারা। উৎসুক দর্শকদের কৌতূহলী চোখও ছিল তাদের দিকে।
টিকিটের জন্য বিক্ষোভ: ম্যাচের দুই দিন আগেই টিকিট বিক্রি শুরু হয় খুলনায়। তারপরও শত শত ক্রিকেটভক্ত টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি। অনেকে আশায় ছিলেন তারা ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে  স্টেডিয়ামের কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে। কিন্তু তার কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যায়। আবার অনেককে টিকিট না  পেয়ে স্টেডিয়াম সংলগ্ন খান-এ-সবুর রোডে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
স্টেডিয়ামের গেটে হাতি: স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে সকাল থেকে দুইটি হাতি দেখা যায়। এই হাতি দেখতেও দর্শকদের উৎসাহের কমতি ছিল না। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে এ উৎসাহ ছিল আরো বেশি। অনেক দর্শকই ক্যামেরা দিয়ে হাতির সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এ সময় অনেককেই বলতে শোনা যায়, খেলা দেখার সঙ্গে বাড়তি হাতি দেখাও হলো। আবার অনেকে মন্তব্য করেন স্টেডিয়ামের ভেতরে আছে টাইগার আর বাইরে হাতি। এ যে সোনায় সোহাগা।
প্রমীলাদের ভিড়: টেস্ট ম্যাচ দেখতে যে শুধু কিশোর-কিশোরীরাই ভিড় করেনি, প্রমীলা দর্শকদের ভিড়ও ছিল লক্ষণীয়। প্রায় সব গ্যালারিতেই কিশোরীদের পাশাপাশি রমণীদের ভিড় ছিল যথেষ্ট। অনেকেই ভাই-বন্ধুদের দিয়ে খেলা দেখার জন্য টিকিট সংগ্রহ করেছেন। আবার অনেকে সরাসরি নিজেই টিকিট কিনেছেন।
খুলনা সিটি কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তার টুম্পা জানালেন, তিনি ক্রিকেটের ভক্ত। তাই টিকিট কেনার জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কাঙিক্ষত টিকিটও তিনি পেয়েছেন। সকাল নয়টার আগেই তিনি স্টেডিয়ামে হাজির হন। মায়ের সঙ্গে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির খুলনা ক্যাম্পাসের এমবিএ’র ছাত্রী ফারিয়া পিংকি। পিংকি জানান, খুলনায় টেস্ট ম্যাচ হবে শুনেই মা-বাবার কাছে আবদার ছিল খেলা দেখার। অনেক কষ্টের  পর  রোববার মধ্য রাতে আমরা দুটি টিকিট কিনতে পেরেছি। আজ  (গতকাল সোমবার) মাকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছি।

No comments

Powered by Blogger.