আইএসবিরোধী মার্কিন ছায়া বাহিনীর পরিকল্পনায় বিপর্যয়- লাভবান হচ্ছেন বাশার

সিরিয়ার বিরোধী পক্ষের একজন নেতা তাদের পরাজয়ের জন্য আইএসের ওপর মার্কিন বিমান হামলাকে দায়ী করেছেন। কারণ এ হামলা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীর জন্য সহায়ক হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার সহায়ক হিসেবে একটি ছায়া বাহিনীকে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করে। গত সপ্তাহান্তে জঙ্গিরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের শক্তঘাঁটি থেকে ওয়াশিংটনের প্রধান মিত্র দলকে বিতাড়িত করে। এ ঘটনায় ওয়াশিংটনের ওই পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ইদলিব শহরের কাছে কয়েক সপ্তাহ ধরে সিরিয়ান রেভ্যুলুশনারি ফ্রন্ট (এসআরএফ) ও আলকায়েদার সাথে ঘনিষ্ঠ জাবহাত আল-নুসরার মধ্যে লড়াই চলার পর শহরটির ওপর হামলা চালায় নুসরা। সিরিয়ার তিন বছরের লড়াইয়ে উত্তরাঞ্চলে ইদলিব শহর হচ্ছে বাশার সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বশেষ ঘাঁটি। নুসরা যোদ্ধারা দেইর সনেবলের এসআরএফ নেতা মারুফের কমান্ড সেন্টার দখল করে নেয়। মার্কিন ও আরব বিমানবাহিনী সেখান থেকে ৩০০ মাইল পূর্বে কুর্দি শহর কোবানির পতন ঠেকাতে আইএস যোদ্ধাদের ওপর অব্যাহত হামলা চালানোর মধ্যে এ শোচনীয় পরাজয়ের ঘটনা ঘটল।
ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলীয় আনবার প্রদেশে শিয়া বাহিনীর সহযোগী এক সুন্নি গোত্রের ২৩০ জনেরও বেশি সদস্যকে আইএস হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত জুনে আইএস ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে নেয়ার পর এটিকে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
মারুফের পরাজয় হচ্ছে আইএসের বিরুদ্ধে ছায়া জোট বাহিনী গঠনের মার্কিন নীতির প্রতি বড় ধরনের আঘাত। মার্কিন বিমান হামলার ঘটনায় বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণাধীন উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ওই অঞ্চলে, বিশেষ করে আলোপ্পোয় এ বিমান হামলা বাশার আল আসাদের বিমানবাহিনীর হামলার তীব্রতা কমাতে কোনোই ভূমিকা পালন করেনি।
এসআরএফ মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম আমেরিকা আমাদের সাহায্য করছে কিন্তু দেখতে পেলাম তারা কেবল আমাদের পরিত্যাগই করেনি উপরন্তু স্বৈরাচারী বাশার আল আসাদকে সাহায্য করছে। আমরা এই বিশ্বাসঘাতকতায় বিস্মিত হয়েছি এবং আমরা জাবাল আল জাবিয়ায় (গ্রুপটির প্রাণকেন্দ্র) ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু এ জন্যও কিছুটা সময় প্রয়োজন।’
মার্কিন নেতৃত্বে আইএস লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চলছে। এতে যোগ দিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। এরই মধ্যে বাশারের বিমানবাহিনী সারা দেশে ব্যারেল বোমা হামলা ব্যাপক জোরদার করেছে। হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষিপ্ত ব্যারেল বোমা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি ঘটায়। গত ১৫ দিনেই সিরিয়ার আটটি প্রদেশের পল্লী অঞ্চলে ৪০১টি ব্যারেল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। এ বোমা হামলায় অজ্ঞাত সংখ্যক যোদ্ধা ছাড়াও দুই শতাধিক অসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
ইদলিবের উদ্বাস্তু শিবিরে অন্তত চারটি ব্যারেল বোমা নিক্ষেপ করেছে বাশারের বিমানবাহিনী। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এ বিমান হামলাকে বর্বর কাজ বলে অভিহিত করেছে। এ শিবিরের বেঁচে যাওয়া হিশাম আহমদ বলেন, অভিন্ন শত্রুর ওপর মার্কিন হামলায় বাশার সরকারের সাহস বেড়ে গেছে এবং নিজেকে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিমুক্ত ভেবে তাদের হামলা আরো জোরদার করেছে। আহমদ তার পরিবার নিয়ে শিবির থেকে তুরস্কে পালিয়ে যাওয়ায় রক্ষা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে মার্কিন সরকার বাশারকে সমর্থন করছে। এ নিয়ে আমার বা অন্য কারোর কাছে যুক্তি দেখানোর কোনো চেষ্টা করার দরকার নেই। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করছে। তাদের নেতারা দুর্বল ও মিথ্যুক।’
জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাশারের ব্যাপারে মার্কিন নীতির অস্পষ্টতার কারণে উত্তর সিরিয়ার বিরোধীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্ক উত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নো ফাই জোন গঠনের জোর দাবি জানিয়ে আসছে। এটি করা হলে অসামরিক লোকদের রক্ষা করা যাবে। কিন্তু এ পরিকল্পনা হালে পানি পাচ্ছে না। কারণ সিরিয়ার মিত্র চীন ও রাশিয়া এ ধরনের প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করলে তাতে ভেটো প্রয়োগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাবেক নির্মাণশ্রমিক থেকে মুক্তি আন্দোলনের নেতা হয়েছেন মারুফ। তার গ্রুপে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। সিরিয়ায় সীমিত মার্কিন সামরিক সহায়তায় যারা লাভবান হয়েছে তাদের একজন হলেন তিনি। সৌদি আরবও ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তার যোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে।
মারুফ সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন কিন্তু গত শুক্রবার পর্যন্ত কোনো সাড়া পাননি। শনিবার এসআরএফের বিপুলসংখ্যক যোদ্ধাকে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে নুসরা বলেছে, মারুফের অনেক যোদ্ধা পক্ষ ত্যাগ করে তাদের দলে যোগ দিয়েছে।
আইএসআইএসের উত্থানের আগে গত বছর এপ্রিল পর্যন্ত জাবহাত আল নুসরা ছিল সিরিয়ার বিরোধীদের মধ্যে আদর্শিক দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রুপ। অনেক সময় তারা এসআরএফ ও অন্যান্য গ্রুপের নিয়ে গঠিত জোট ইসলামিক ফ্রন্টের সহায়ক বাহিনী হিসেবে লড়াই করত। কাতার ও তুরস্ক এ ফ্রন্টকে সমর্থন করে বলে বলা হয়ে থাকে।
গত ছয় সপ্তাহে মার্কিন বিমান হামলায় নুসরার ৫০ যোদ্ধা নিহত হওয়ার গ্রুপটি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অথচ মার্কিন বিমান হামলার একমাত্র টার্গেট ছিল আইএস। এরপর নুসরার নেতারা উত্তর সিরিয়ায় আইএসের সাথে এক ধরনের ঐক্য গঠন করেছেন। অসমর্থিত খবরে বলা হয়েছে, মারুফের অঞ্চলে হামলায় নুসরার সাথে আইএস যোদ্ধারাও অংশ নিয়েছিল।
কোবানিতে আইএসকে হঠানো এখনো সম্ভব হয়নি। উত্তর ইরাকের কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী কোবানিতে এসে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কুর্দি যোদ্ধারা আসার সময় ভারী কামান নিয়ে এসেছে। তুরস্ক পেশমার্গা যোদ্ধাদের কোবানিতে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। কোবানির অর্ধেকটা এখনো আইএসের দখলে রয়েছে।
কোবানি যেমন কুর্দি ও আইএসের মধ্যে লড়াইয়ের কেন্দ্র তেমনি তা আইএস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধেরও কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মার্কিন সহায়তায় কুর্দিরা গত আগস্টে ইবরিলে আইএসের অগ্রাভিযান ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। আইএস কোবানি দখল করতে পারলে এটি হবে তাদের জন্য একটি বড় বিজয়। সেক্যুলার কুর্দিদের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থী আইএসের এ বিজয় তাদের মতাদর্শ বিস্তারে সহায়ক হতে পারে।
সূত্র : ইয়াহু নিউজ

No comments

Powered by Blogger.