বার্ধক্যের ছাপ এড়াতে পাঁচ কথা

ব্রিটেনের অনেক লোকই দীর্ঘায়ুর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। এর জন্য তারা নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাবার দাবার নিয়ন্ত্রণ করে চলছেন। সম্প্রতি ‘লঙ্গেভিটি সাইন্স প্যানেল’ নামের দীর্ঘাযু বিষয়ক একটি গবেষণা সংস্থা তাদের সদস্যদের জন্য পরামর্শও তৈরি করেছেন। তারা বলেছেন নিয়মিত হাঁটার মতো প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন যাপন মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। এতে শরীর থেকে চিনি, লবন এবং চর্বি কমে যায়। এ ছাড়া খাবারের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি কোষ বিভাজনের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখবে এমন কিছু ওষুধ গ্রহণ করলে মানুষের শরীরে বার্ধক্যের ছাপ দেরিতে পড়বে।

দ্যা টেলিগ্রাফে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পরামর্শগুলো তুলে ধরা হয়। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা বার্ধক্য কী, কিভাবে বার্ধক্য প্রক্রিয়ার গতি ধীর করা যায় এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ছাড়া তারা ওষুধ ব্যবহারের প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন, যেগুলো শরীরের কোষ বিভাজনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
প্যানেলের চ্যায়ারম্যান ড্যমি ক্যারেন বলেন, বার্ধক্য প্রক্রিয়া একটি বায়োলজিক্যাল জটিল বিষয়। প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাবার এই প্রক্রিয়াটিকে ধীর করতে ভ’মিকা রাখে।
গবেষকরা বলেন, সাধারণত ধারণা করা হয় কম বয়সিদের চেয়ে বেশি বয়সিদের ওপর বার্ধক্যের প্রভাব বেশি থাকে। কিন্তু এটি অনিবার্য নয়। করণ শরীরের সকল কোষগুলোকে ডিএনএ ব্লু প্রিন্ট ধারণ করে রাখে। আর এটিকে সংরক্ষণ করে রাখে দেহ। কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষেত্রে বয়স প্রভাব ফেলে না।
তারা বলেন, মানুষ বৃদ্ধ হয় মূলত কোষ বিভাজনের সমস্যার কারণে। এই কোষ বিভাজন মানুষের বেড়ে ওঠা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উন্নতি এবং মৃত কোষগুলোর যায়গায় নতুন কোষ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়। একজনের জীবনে অনেক অনেক বিলিয়ন কোষ বিভাজন ঘটে। এসব বিভাজন প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। তবে ধূমপান, অ্যালকোহল এবং অতিরিক্ত খাবার এদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবার একটি কোষ বিভাজনে ডিএনএর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও সঙ্কুচিত করে। এটা টলেমারিস হিসেবে পরিচিত। এই টলেমারিসগুলো একটু বড় হয়ে উঠলেই এরা কোষ বিভাজনে থামিয়ে দেয়। আর এই প্রক্রিয়াটাকেই বলা হয় বার্ধক্য। বার্ধক্য প্রক্রিয়া বাড়তে বাড়তেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটা ধ্বংশ হওয়া কোষগুলোকে তৈরি হতে দেয় না। এ কারণেই শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে।
তারা দাবি করেন নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াকে ধীর করা যায়। পাশাপাশি কিছু ওষুধ গ্রহণ করে নস্ট কোষগুলোকে সরিয়ে নতুন করে কোষ তৈরি হওয়ার পথ স্বাভাবিক করা যায়।

গবেষকরা তাদের দীর্ঘ গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে উপবাস থাকলেও শরীরে ভালো প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া শরীরে  কম ক্যালরি ধরে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
তারা দুই হাজার পাঁচ শ’ বছর আগে হিপোকেৃট এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন হাঁটা শরীরের জন্য উপকারি। সাম্প্রতিক সময়ের গবেষকরাও মানুষকে হেঁটে হেঁটে ক্যালরি খরচ করার উপদেশ দেন।
প্যানেলের সদস্যরা দাবি করেন তাদের উপদেশ মেনে চললে বর্তমানে জন্ম নেয়া মেয়ে শিশুরা গড়ে ৮২.৮ বছর এবং ছেলে শিশুরা ৭৮.৮ বছর বেঁচে থাকতে পারবে। তবে কয়েকজন সদস্য বার্ধক্যের বিপরীত অনুশীলন করে ১২০ বছরও বেঁচে থাকতে চান।
ব্রাইটোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োজেরোনটোলোজির অধ্যাপক রিচার্ড ফ্যার‌্যাগার বলেন, দীর্ঘদিন সুস্থ স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য জীবন যাপনের পদ্ধতির ভ’মিকা বড়। বার্ধক্য আমাদেরকে দীর্ঘদিন বাঁচতে দেয় না।
বার্ধক্যের ছাপ এড়াতে সহজ পাঁচটি উপায়ের কথা বলেছেন তারা। এগুলো হলো ভালো খাবার গ্রহণ করা, কাজ করা, কম পান করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং কখনো ধূমপান না করা।

No comments

Powered by Blogger.