সরকার দেশটাকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। শনিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের সমাবেশ করতে দেয়নি, আমরা এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এর প্রতিবাদে কাল (রোববার) ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারা দেশে জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ২৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠায় বিএনপি। শুক্রবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না দেয়ায় শনিবারের সমাবেশ বাতিল করা হয়।সরকার গোটা দেশটাকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এমন মন্তব্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র এখন পুলিশের বুটের নিচে। পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা এতই ক্ষমতাশালী হয়েছেন, তারা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার মিছিল-মিটিং করতে দেন না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে দেয়া হয় না। কি দুর্ভাগ্য আমাদের। জনসভার মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচিও আজ করতে পারছি না।সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আমরা সব আইন মেনে চলতে চেষ্টা করেছি। সভা-সমাবেশ করার ন্যূনতম সুযোগ আমাদেও দেয়া হচ্ছে না। অবৈধ সরকার গণতন্ত্রে কোনো স্পেস রাখছে না। আওয়ামী লীগ একের পর এক আইন করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। দেশটাকে তারা স্বৈরাচার একনায়কতন্ত্রের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এর পরিণতি অতীতেও ভালো হয়নি, এখনও হবে না।’সভা-সমাবেশের অনুমতির ক্ষেত্রে সরকারের দ্বৈতনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে। আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে, মিছিল করে। ক্ষমতাসীনদের জন্য কোনো অনুমতি লাগে না। অন্যদিকে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। আইনি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে অনুমতি চাইলেও পাওয়া যায় না। সম্প্রতি যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজের বাসায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করতে গেলে পুলিশ তাদেও গ্রেফতার করে। এক দেশে দুই আইন। পুলিশের এহেন অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।ফখরুল বলেন, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতা কাদের হাতে। সরকার পুলিশ ও র‌্যাবের ওপর ভর করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’র গুরুত্ব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ৭ নভেম্বর গণতন্ত্রের নতুন করে জন্ম হয়েছিল। এই দিনটি হচ্ছে অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরার দিন। যারা এ দিনটি পালন করে না বা পালন করতে দেয়া না, তারা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। ৭ নভেম্বর অস্বীকার করা, বাংলাদেশকে অস্বীকার করার শামিল।জিয়াউর রহমানকে চতুর্থ মীরজাফর বলায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইনু সাহেবরা ৩০ হাজার নেতাকর্মীর রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করেছেন। ইতিহাসে ঘৃণিতভাবে তাদের নাম লেখা থাকবে। তিনি বলেন, যারা জিয়াউর রহমানকে আইএসআইয়ের চর বলেন, তারা কিন্তু ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে ছিলেন না। তাদের কেউ পাক বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কেউ আবার ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অথচ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত দাবি করে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাট করে সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শেয়ারবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে লাখ লাখ মানুষকে পথে বসিয়েছে। কিন্তু ওইসব লুটপাটকারীর কোনো বিচার হয়নি। হলমার্ক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও এর নেপথ্য নায়করা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারি প্রতিটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে ফেলেছে। লুটপাটের এসব টাকা বিদেশেও পাচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক এ সেক্টরে তাদের ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয়। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির জন্য বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হলেও তা বন্ধে সরকারের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, মহানগর সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুল লতিফ জনি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, শামীমুর রহমান শামীম, আনোয়ার হোসাইন, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, হাফেজ আবদুল মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.