উন বাবার চেয়েও ভয়ংকর

ইল ছিলেন শতভাগ বিশ্বস্ততাপ্রত্যাশী শাসক এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার তুচ্ছতম সংবাদও তিনি গুরুতরভাবে নিতেন। ইলকে সবাই ভয় পেত, কারণ কখন তার মেজাজ ভালো থাকে আর কখন খারাপ থাকে তা বোঝা যেত না। মেজাজ খারাপ থাকলে হয়তো কারও হাতও কেটে নিতে দ্বিধা করতেন না তিনি। উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসক কিম জং ইল সম্পর্কে এভাবেই বললেন তার সাবেক দেহরক্ষী লি ইয়ং গুক। সম্প্রতি সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির অভ্যন্তরীণ এবং ইল সম্পর্কিত নানা তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
শুক্রবার টেলিগ্রাফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লি জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার বর্তমান শাসক ইলের পুত্র কিম জং উন তার বাবার চেয়েও অতি ভয়ংকর। ইলের মৃত্যুর পর তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে একই ধরনের জীবনযাপন ও দেশশাসন করছেন পুত্র উন। দুজনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে অসম্ভব মিল। তার মধ্যে একটি হল তাদের দেহরক্ষী ব্যবস্থা ও অন্যটি হল নিজের সঙ্গে সারাক্ষণ লিপিকার রাখা। যদিও পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলো এই দুটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কিম জং উনের সমালোচনা করে আসছে।১৯৮০ সালের এক ঘটনায় এই দেহরক্ষী নিজের প্রাণ বাজি রেখে কিম জং ইলের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। প্রয়াত শাসক কিম ইল সাং ১৯৭৯ সালে লি ইয়ং গুককে দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।নিয়োগ-পরবর্তীতে তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এলিট দেহরক্ষী দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। লি ইয়ংয়ের ভাষায়, কিম ছিলেন শতভাগ বিশ্বস্ততাপ্রত্যাশী শাসক এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিন্দুমাত্র সংবাদও তিনি গুরুতরভাবে নিতেন।কিম প্রশাসন লি ইংয়ের ব্রেনওয়াশ করে দিয়েছিল বলেও সিএনএন বরাবর জানান তিনি। কথা প্রসঙ্গে লি সিএনএনকে বলেন, কিম জং ইল যখন গাড়ি করে আসতেন তখন তার পরামর্শকরা তার পেছনে পেছনে দৌড়াতেন। অনেক সময়ই তারা মাটিতে পড়ে যেতেন এবং তাদের পোশাক অপরিষ্কার হয়ে যেত। একজন পরামর্শক কিমের ব্যক্তিগত লিফট এবং অ্যাশট্রে ব্যবহার করার কারণে তাকে আজীবন কারাগারে থাকতে হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।তবে কিং জং উন সম্পর্কে বলতে গিয়ে লি বলেন, উত্তর কোরিয়ার মানুষকে কিম জং ইলের চেয়ে উনকে ভয় করার যথেষ্ট কারণ আছে। নিজের চাচাকে হত্যার ভেতর দিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন। উন তার ভাবমূর্তি দ্বারা একটি মেকি এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে।দেহরক্ষী হিসেবে লি দীর্ঘদিন কিম পরিবারের সঙ্গে থাকলেও তাকেও সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি তারা। চীনের সীমান্তের কাছাকাছি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় লিকে গ্রেফতার করে উত্তর কোরিয়ার পুলিশ। এরপর বিচারে তাকে শ্রম শিবিরে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে কিম জং ইলের দেহরক্ষী থাকাকালীন সময়কার অভিজ্ঞতা নিয়ে লি একটি বই লেখেন।

No comments

Powered by Blogger.