আইএসবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশকে পাশে চায় আরব বিশ্ব by রাহীদ এজাজ

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে বাংলাদেশকে পাশে চায় আরব বিশ্ব। কয়েকটি আরব দেশ এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানাতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অনুরোধ সম্প্রতি বাংলাদেশ ফিরিয়ে দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরের সময় এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এই কট্টর সুন্নিপন্থী গোষ্ঠীর (আইএস) বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে ইতিমধ্যে যোগ দিয়েছে সৌদি আরব, ইউএই, কাতার ও বাহরাইন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে আইএসকে মোকাবিলার প্রসঙ্গটি সুস্পষ্টভাবে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে এবং এই অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়। সন্ত্রাসবাদের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় দুই পক্ষ গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আইএসের মতো গোষ্ঠীকে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবিষ্যতে আইএসবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশকে পেতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ যুক্ত হলে এ ধরনের অভিযানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যৌথ ঘোষণায় বিষয়টির উল্লেখ করে এই অবস্থানই তুলে ধরেছে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
গত আগস্ট থেকে আইএসবিরোধী সামরিক অভিযানে আরব বিশ্বের যেসব দেশ যুক্ত হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত তার একটি। সামরিক অভিযানের পাশাপাশি দেশটি ইরাক ও সিরিয়ায় মানবিক সাহায্য কর্মসূচিতেও যুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া আইএসের অর্থায়ন বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যৌথ টাস্কফোর্সেও যুক্ত আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যেকোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং মৌলবাদ ও অপশক্তির বিরুদ্ধে। পাশাপাশি কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতায়ও বিশ্বাসী বাংলাদেশ। সামগ্রিক বিবেচনায় সামরিক অভিযান নয়, শুধু জাতিসংঘের অধীনে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ইরাক ও সিরিয়ায় যেতে পারে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আইএসবিরোধী কোনো সামরিক অভিযানে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। শুধু জাতিসংঘের অধীনে ইরাক ও সিরিয়ায় কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নেওয়া হলে তাতে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারে।
আইএসবিরোধী সামরিক অভিযানে কোনো ধরনের নৈতিক সমর্থন বাংলাদেশ দেবে কি না, জানতে চাইলে গওহর রিজভী বলেন, এ ধরনের অনুমাননির্ভর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের অভিযানে সমর্থনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অব্যাহত চাপ এড়ানো সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, শুধু পাশ্চাত্যের দেশগুলোই নয়, ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে আইএসবিরোধী অভিযানে যোগ দেওয়ার চাপ বাড়তে থাকলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। ওয়াশিংটনে গতকাল থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব সংলাপেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
চুক্তির ওপর নির্ভর ভবিষ্যৎ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইউএই সফরে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশের শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। অবশ্য তাঁর সফরের আগে সরকারও এ নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থেকেছে।
আবুধাবি ও দুবাইয়ে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সই হওয়া নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী হস্তান্তর চুক্তি সই বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে দেশটিতে জটিলতা অবসানের প্রাথমিক পদক্ষেপ। স্পষ্ট করে উল্লেখ না করলেও আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমও জটিলতার কথা উল্লেখ করেছেন। এখানে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের অপরাধমূলক তৎপরতায় জড়ানোর হার বৃদ্ধিতে তাঁদের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন।
কূটনীতিকেরা জানান, এ দুটি চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে দেশটিতে শ্রমবাজার কতটা খুলবে। বিশেষ করে এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইউএইর নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ দূর করতে বাংলাদেশ কতটা সচেষ্ট, তা দেশটি দেখবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বিষয়টির সুরাহা হবে। তবে এর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ন্যূনতম ছয় মাস।
বাংলাদেশের কর্মীদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের আগস্ট থেকে আরব আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানি একেবারে সীমিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসাও দেওয়া হচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে। বর্তমানে বাংলাদেশের এক হাজার ১৯ জন নাগরিক আরব আমিরাতে কারাবন্দী রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১০ জন মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় আছেন।
অন্যদিকে নারী কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে ইউএই ঢাকায় প্রথমবারের মতো শ্রম কর্মকর্তা নিয়োগ করতে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়াটি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে নিলে প্রাথমিকভাবে এক হাজার কর্মী নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই সংখ্যাও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.