‘ক্যামেরন-হাসিনা বৈঠক বৃটেনের জন্য বিব্রতকর’ by তানজির আহমেদ রাসেল

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের জন্য বৃটেন ‘বিব্রত’ বলে মন্তব্য করেছেন বৃটিশ এমপি সায়মন ডানসাক। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ক্যামেরন-হাসিনা বৈঠক তার নিজের এবং বৃটেনের মানুষের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন তিনি। ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করায় তিনি নিজে অনুতপ্ত উল্লেখ করে সায়মন ডানসাক বলেন, যে নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, আর বাকি আসনগুলোতে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয় সে নির্বাচন কিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে? সোমবার বিকালে বৃটেনের হাউস অব লর্ডসে ওভারসিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকে’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যর্থতা ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ডানসাক বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। কিন্তু সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক আস্থার অভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি জটিল আকার ধারণ করেছে। তাই উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে বৃটেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী  দেশগুলো মনে করে অতি দ্রুত সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে খুবই জরুরি।

বৃটিশ লর্ড আহমদের সভাপতিত্বে ও  বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকে’র  চেয়ারপারসন আতা উল্লাহ ফারুকের সঞ্চালনায়  সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জন হ্যামিং এমপি, জিম ফিজপেট্রিক এমপি, ভিপিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্লস লাইগু, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ার তারেক রহমানের শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাহাদী আমিন, আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, বাথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. পলাশ কামরুজ্জামান প্রমুখ।
লর্ড আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ছিলেন তখন বৃটিশ পার্লামেন্টের মাধ্যমে তার দেশে যাওয়া নিশ্চিত করেছিলাম। গণতন্ত্রের স্বার্থে যাকে বাংলাদেশে যেতে সহযোগিতা করেছিলাম আজ তার হাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে- এটা সত্যিই  দুঃখজনক।
জন হ্যামিং এমপি বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় ও বেশির ভাগ জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ না পাওয়ায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি, যা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী এ ধরনের নির্বাচন কোন দেশের অগ্রগতিতে সহায়ক হতে পারে না।  তাই বাংলাদেশকে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়া উচিত। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটি সফলতা পেয়েছে।
আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেন, বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই, এই সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ বৈধতা দেয়নি। পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এ সব পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কাউকে সুযোগ দেয়া হয় না। বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় তার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের বাকি জনগণের মধ্যে যেন একটি যুদ্ধ চলছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আব্বাস ফায়েজ বলেন, বাংলাদেশে গুম, হত্যা, ক্রসফায়ার, রাজনৈতিক হয়রানি বেড়েই চলেছে যা বাংলাদেশকে বিশ্ব রাজনীতিতে হুমকির সম্মুখীন করে তুলছে। তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য র‌্যাবকে দায়ী করে বলেন, তাদের হাতে এ সংক্রান্ত প্রমাণ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এভাবে কোন গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। এ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অপরাধীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে- যা গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য নয়।
জিম ফিজপেট্রিক এমপি বলেন, আমরা বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করে যাবো। ভিপিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর কার্ল লাইগু বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি তাতে মনে হয় বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচিত কোন সরকার নেই। ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা নেই’ উল্লেখ করে তিনি একাডেমিক কমিউনিটিকে যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আইনজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.