মাদক সন্ত্রাসের হাতে বন্দী জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা by আবু সালেহ আকন

মাদকসন্ত্রাসীদের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছেন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা। প্রকাশ্যেই এখানে চলছে মাদক ব্যবসায়। মাদকসন্ত্রাসীরা পুরোপুরি বন্দী করে ফেলেছে এই এলাকার মানুষকে। সন্ত্রাসী আর মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে এই এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসকবলিত এই এলাকার মানুষের ঘুম ভাঙে মাদকসেবীদের মুখ দেখে, আবার ঘুমাতে যেতে হয় এই মাদকসেবীদের গা মাড়িয়ে। এ কারণে এই এলাকায় বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ। স্থানীয় সূত্র জানায়, জেনেভা ক্যাম্প ও এর পাশের এলাকায় মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে ২৩ ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ১১ জন মাদকের ডিলার। এমন কোনো মাদকদ্রব্য নেই যা এই এলাকায় পাওয়া যায় না। গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি মদ এখানে এতটাই সহজলভ্য যে কিশোর-কিশোরীরাও এসব মাদকদ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদকের ১১ ডিলার হচ্ছে পাচু ওরফে ইয়াবা পাচু, আরশাদ ওরফে মাদক সম্রাট, পাপিয়া, শাকিল ওরফে গাঁজা শাকিল, পচিশ ওরফে বোমা পচিশ, সেলিম ওরফে চুহা সেলিম, সাহাব উদ্দিন, ইসতিয়াক, জয়নাল ওরফে নাজায়েজ, আবুল ওরফে মাছুয়া আবুল ও রানী। এ ছাড়া রয়েছে ১২ জন মাদক বিক্রেতা। তারা হলোÑ জাহিদ, রানা ওরফে ইয়াবা রানা, মিঠঠু, শাহজাদা, রাজা, সেলিম ওরফে টেরা সেলিম, কোরবান, আলমগীর ওরফে আন্ডে, আলমগীর, মাহবুব, রাহী ওরফে লম্বু রাহী ও মিলন। তারা জেনেভা ক্যাম্পেরই বাসিন্দা। তাদের আবার অর্ধশত সেলসম্যান রয়েছে পুরো ক্যাম্পজুড়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই মাদকের টাকার ভাগ পায় অনেকেই। এমনকি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান জিলানীর বিরুদ্ধেও মাদকের টাকার ভাগ নেয়ার অভিযোগ আছে। এক সময় এই মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করত ছটু ও আরশাদ। তারা এখন নিষ্ক্রিয় বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। সীমা নামের অপর এক নারী রয়েছেন যিনি এই ক্যাম্পে বসবাস না করলেও ক্যাম্পের অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে। মাছুয়া সাঈদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পের বেশির ভাগ এলাকা। জেনেভা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান এস কে গোলাম জিলানী বলেছেন, মাদক ব্যবসায় চলছে; তবে আগের তুলনায় কম। মাদক ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেয়া হয়েছে। তারা চাইলে এক দিনের মধ্যেই মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই ক্যাম্পের মাদক বাণিজ্য থেকে মোটা অঙ্কের ভাগ পায় স্থানীয় থানা পুলিশ। এ কারণেই এই এলাকার মাদক ব্যবসায় বন্ধ হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশের কাছে এই এলাকার সব মাদক ব্যবসায়ীর নাম আছে। তারা চাইলেই সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতি মাসে তাদের টাকা দেয়। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই এলাকার চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের বেশির ভাগ মাদকসেবী। তারা প্রকাশ্যে মাদক সেবন করলেও পুলিশ কিছু বলে না। ক্যাম্পের ভেতরেই তাদের মাদক সেবনের আস্তানা রয়েছে। ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, তারা শুধু ক্যাম্পেই নয়, আশপাশের এলাকাতেও চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই করে থাকে। ক্যাম্প সূত্র জানায়, এই এলাকায় মাদক সেবন করতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকসেবীরা এসে থাকে। মাদক ব্যবসায় নিয়ে ক্যাম্পে প্রায়ই সংঘর্র্ষ ঘটে। জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায় নিয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানার ওসির সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.