স্টেডিয়ামে মন্ত্রীর হেলিকপ্টার, অতঃপর... by রাশিদুল ইসলাম

সব কিছু ঠিকঠাক, একটু পরেই খেলা শুরু হবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করেই হেলিকপ্টার অবতরণ করে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে। বন্ধ হয়ে যায় খুলনার প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লীগের আবাহনী ও মহেশ্বরপাশা ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা মাঠ থেকে খেলোয়াড়দের বের করে দেন। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসতে দেখা যায় গৃহায়ন ও  গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শক ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। বিকালে মন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে ফেরার সময় বিক্ষুব্ধ দর্শকরা মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মন্ত্রী তড়িঘড়ি করে  হেলিকপ্টারে ওঠেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামের প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লীগের আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও মহেশ্বরপাশা ক্লাবের খেলা ছিল। দুপুর ১২টা থেকেই দুই দলের দর্শকদের আগমনে স্টেডিয়ামের গ্যালারি অর্ধেকটা ভরে যায়। এর মধ্যে  হেলিকপ্টারে করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন। মাঝমাঠে  হেলিকপ্টার রাখায় খেলোয়াড়দের অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিরাপত্তার কথা বলে মাঠ থেকে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের বের করে দেয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় মন্ত্রীর খুলনা ত্যাগের কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। ফলে নির্ধারিত খেলাটি হয়নি। স্টেডিয়ামের  পূর্ব গেটেই সার্কিট হাউজের সামনেই রয়েছে সরকারি হেলিপ্যাড।  এখানেই স্বাভাবিকভাবে সবসময় হেলিকপ্টার অবতরণ করে। কোন কারণে নির্ধারিত রেখে খেলা চলাকালে স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার অবতরণ করলো তার কারণ সঠিক বলতে পারেননি খুলনা জেলা প্রশাসক।

ফুটবল লীগ কমিটির সম্পাদক মোতালেব মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন বেলা ২টার ভেতরে মন্ত্রী চলে যাবেন এবং নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু করা যাবে। এজন্য আমরা খেলা  পিছাইনি। কিন্তু সাড়ে ৩টার সময়ও হেলিকপ্টার না সরানোয় আমরা সার্কিট হাউজে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং হেলিকপ্টার সরানোর অনুরোধ করি। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে মন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে মন্ত্রী স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলে দর্শকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়। এ সময় কয়েকজন বিক্ষুব্ধ দর্শককে জুতা প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। খুলনা আবাহনী ক্রীড়া চক্রের কর্মকর্তা মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, একটি ম্যাচের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে খেলোয়াড়রা এসেছেন। তাদের হোটেলে রাখা এবং নির্ধারিত দিনের জন্য অগ্রিম টাকাও দেয়া হয়েছে। খেলা না হওয়ায় পুরো টাকাই পানিতে গেল। জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইউসুফ আলী বলেন, ফুটবলে এখন দর্শক আসে না। বড় দুই ক্লাবের খেলা হওয়ায় অনেক দর্শক এসেছিলেন। সবাই মন খারাপ করে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, খেলা না হওয়ায় ক্লাবগুলোর সঙ্গে আমাদেরও অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উল্লেখ্য, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করতে পূর্তমন্ত্রী মঙ্গলবার খুলনায় আসেন। বেলা ২টায় সাংবাদিকসহ সুধীজনদের সঙ্গে তার মতবিনিময় করার কথা ছিল। বিকাল ৪টা পর্যন্ত সবাই সার্কিট হাউজে অপেক্ষা করলেও কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই তিনি ঢাকায় ফিরে যান।

No comments

Powered by Blogger.