ইতিহাসের পাতায় ২৮ অক্টোবর by এরশাদ মজুমদার

আল্লাহ পাকই মানবজাতির জন্য দিনণ, মাস, বছর ও রাত-দিন তৈরি করেছেন। মানুষকে দিন-রাত্রির জ্ঞান দান করেছেন। এই জ্ঞান দিয়েই মানুষ দিনণ গণনা শিখেছে। ইতিহাস রচনা করা শিখেছে। মুসলমান জ্ঞানীগুণী ও ইতিহাসবিদেরা মানবজাতিকে ইতিহাসবিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়েছেন। ভারতে ইতিহাসবিজ্ঞানের জ্ঞান ও চর্চা নিয়ে এসেছেন মুসলমানেরা। বিশেষ করে মোগল যুগে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাস রচনা শুরু হয়েছে। জওয়াহেরলাল নেহরু নিজে এ কথা বলেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ উদ্বোধন করার সময় প্রিন্স চার্লস বলেছিলেন, মুসলমানেরাই ব্রিটেনসহ ইউরোপে জ্ঞানের আলো নিয়ে গেছে। দিন বা তারিখের নিজস্ব কোনো গুণ নেই। ঘটনাপ্রবাহ দিন বা রাত্রিকে স্মরণীয় করে রাখে। তাই এসব দিন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়। পবিত্র কুরআন নাজিলের দিনণ স্মরণীয় হয়ে আছে কুরআনের কারণে। আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করি। কারণ এরা নিজেদের জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। একসময় মুসলমানদের মুক্তির জন্য মুসলিম লীগ সংগ্রাম করেছে। তাই ইতিহাসে মুসলিম লীগ স্থান করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখার কারণে ইতিহাসে দলটি দৃঢ় অবস্থান করে নিয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করা হয়। একইভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বা পাঠ করে শহীদ জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজেকে অমর করে রেখেছেন। একইভাবে জিন্নাহ ও গান্ধীজী ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ইতিহাসে নিন্দিত ব্যক্তিও আছেন, যেমন জেনারেল মীর জাফর আলী খান ও লর্ড কাইভ। কাইভ নবাবের কোষাগার লুণ্ঠন করে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন। কারবালার যুদ্ধের কারণে খলিফা ইয়াজিদ একজন মহা নিন্দিত ব্যক্তি হিসেবে স্থান পেয়েছে।
ইতিহাসের এই দিনে ১৯৪০ সালে হিটলার ও মুসোলিনি ফোরেন্সে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন। এই দু’জনই ছিলেন জগদ্বিখ্যাত স্বেচ্ছাচারী শাসক। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ইসরাইল তার রাষ্ট্রীয় পতাকার নকশা অনুমোদন দেয়। এই তারিখেই ১৯৪৯ সালে ইহুদিবাদী নেতা নেতানিয়াহুর জন্ম হয়েছে। ১৯৪৫ সালের এই দিনে ফরাসি দেশের নারীরা ভোটাধিকার লাভ করেছেন। ইতিহাসের কারণেই আমরা অতীতের কথা জানতে পারি। তবে আমরা যে ইতিহাস জানি, তা হলো, বিজয়ীর ইতিহাস। রাজার ধর্মই জনগণের ধর্মে পরিণত হয়েছে। রাজারাই কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদদের রাজার পে ইতিহাস রচনা করতে বাধ্য করে থাকে। যেমন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব নাকি হিন্দুবিদ্বেষী ছিলেন বলে একশ্রেণীর ঐতিহাসিক লিখে গেছেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন দরবেশ সম্রাট। সেলাই করে আর হাতে লিখে কুরআনের কপি করতেন এবং তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি সারা ভারতে বহু মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য টাকা বরাদ্দ করেছেন। অপর দিকে বাদশাহ আকবর দ্বীনে ইলাহি চালু করে সনাতনধর্মীদের কাছে প্রিয় হয়েছেন আর মুসলমানদের কাছে নিন্দিত হয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে আবু জেহেল ও আবু লাহাব দু’জন মহা নিন্দিত ব্যক্তি। অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে, ইতিহাস কখনোই নিরপে হয় না। ত্যাগী ইতিহাসবিদ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকেরা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিদেশে অবস্থান করে সত্য ইতিহাস তৈরি করে রেখে যান আগামী দিনের সত্যান্বেষীদের জন্য। আবার অনেকেই বলেন, সমকালে নিরপে ইতিহাস রচনা করা যায় না। যেমন, নবাব সিরাজ উদদৌলার ইতিহাস। বেশ কয়েকজন সনাতনধর্মী ইতিহাসবিদ ও ইংরেজ সিরাজকে কলঙ্কিত করে ইতিহাস রচনা করেছেন। অনেক কবি-সাহিত্যিকও নবাবের বিরুদ্ধে কবিতা ও সাহিত্য রচনা করেছেন। কিন্তু সত্য ইতিহাস চাপা পড়েনি। মুসলমান খলিফাদের (কার্যত বাদশাহ) আমলে বহু ইসলামিক পণ্ডিত, আলেম ও স্কলারদের নির্যাতন সহ্য করে শহীদ হতে হয়েছে। এমনকি প্রতিপরে আক্রোশ থেকে রা করার জন্য জ্ঞানের দুয়ার হজরত আলী রা:-এর কবর বা মকবরাকে ৯০ বছর লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। আপনারা আসাদুল্লাহ হজরত আলী রা:-এর ভাষণগ্রন্থ নাহজুল বালাগা পড়তে পারেন তাঁর জ্ঞানের গভীরতা জানার জন্য। আমাদের হানাফি মাজহাবের ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার জীবনী পড়ুন। তখনকার মুসলমান খলিফা তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। ইতিহাসের প্রথম মরমি কবি মনসুর হাল্লাজকেও হত্যা করেছেন তখনকার খলিফা। যদিও খলিফার মা হাল্লাজের প হয়ে মা প্রার্থনা করেছিলেন। বলা হয়, শুধু শরিয়ত রা করার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে ইংল্যান্ডের রাজা অনেক ধর্মযাজককে হত্যা করেছেন। একই কারণে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকেও হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে কোটি কোটি মানুষকে জগতের মতাবানেরা। মানবজাতির ইতিহাস এভাবেই কলঙ্কিত হয়ে আছে।
যে ভারত মুসলমান শাসকেরা শাসন করেছেন এক হাজার বছরের মতো, সেই ভারতকে মুসলমান নেতারা কখনোই খণ্ডিত করতে চাননি। চেয়েছেন গান্ধীজী, গোখলে, প্যাটেল ও নেহরুজী। আর তাদের সহযোগিতা করেছেন ইংরেজ শাসকেরা। মুসলমান নেতারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তান নামে একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি করেছেন। কংগ্রেস নেতারা যদি একটু সহনশীল হতেন তাহলে ভারত বিভক্ত হতো না। কিন্তু বিভক্ত ভারতের জন্য দায়ী করা হলো মুসলমানদের। এমনকি বাংলাদেশে এখনো মুসলমান স্বার্থবিরোধী কিছু আরবি নামধারী রাজনীতিক ও দলদাস বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ভারত ও বঙ্গদেশ বিভক্তির জন্য মুসলমানদের দায়ী করে থাকেন। বাংলাদেশে মুসলমান মেজরিটি বাস্তবতায় যারা বিশ্বাস করেন না, তারা মনে করেন বাংলাদেশ বাঙালিদের দেশ। এ দেশে ধর্মীয় মেজরিটির স্বার্থ রাকে এরা সাম্প্রদায়িকতা মনে করেন। এরা বলেন, বাঙালিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ফলে তাদের কাছে বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ নয়, ভারতের দর্শনই তাদের দর্শন। ভারত বাংলাদেশকে শুধু বাঙালির দেশ হিসেবে দেখতে চায়। এর অর্থ মেজরিটি হিসেবে মুসলমানদের কোনো গুরুত্ব থাকবে না। আমাদের বাপ-দাদারা মুসলমানদের এগিয়ে নেয়ার জন্য রাজনীতি করেছেন আর এখন তাদের নাতিপুতিরা ধর্মমুক্ত বা ধর্মবিরোধী অবস্থানে থাকতে পছন্দ করেন। মেজরিটি মানুষের স্বার্থ ত্যাগ করে মাইনরিটির স্বার্থ রার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। চলমান সরকার রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সংবিধানকে আল্লাহ-মুক্ত করেছেন। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা:কে গালি দিলে সরকারের তেমন শক্তিশালী কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। মতাবান ব্যক্তিদের সমালোচনা বা ব্যঙ্গ করলে শাস্তি হয়। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে ব্লগ লিখে রাজীব নামে এক যুবক নিহত হলে সরকারের মন্ত্রী বলেছেন, দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রথম শহীদ। মন্ত্রীর কাছে শহীদ মানে হলো রাজনৈতিক গুণ্ডাপাণ্ডা ও দলদাস হলেই শহীদ হবে। ইসলামে শহীদ মানে ধর্ম রায়, আল্লাহর নির্ধারিত পথে চলতে গিয়ে জীবন দিলে শহীদ হওয়া যায়। রাজনীতিতে ধর্মদ্রোহীদেরও মর্যাদা থাকতে পারে। জগতে ৭০০ কোটি মানুষ থাকলে তার ৯৯ শতাংশ মানুষই ধর্মে বিশ্বাস করেন। হয়তো অনেকেই পূর্ণাঙ্গ চর্চা করেন না। কিন্তু খোদা বা তাঁর নবী-রাসূলদের অমান্য বা অস্বীকার করেন না। তবে মোনাফেক থাকতে পারেন। আমি সব সময় বলে আসছি, বাংলাদেশে ইংরেজি শিতি ও অর্ধশিতি কিছু মানুষ ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের বেশির ভাগই সুবিধাবাদী। তাদের আদর্শ দর্শন হলো, যেভাবেই হোক ভোট আদায় করে মতায় যাওয়া। ফলে বাংলাদেশ একটি আদর্শবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রথম জীবনে রাজনীতি শুরু করেছিলেন একজন মুসলমান হিসেবে। সনাতনধর্মীদের অত্যাচার তিনি ও তার পরিবার প্রত্য করেছেন। রমাপদর মিথ্যা মামলায় তিনি জীবনে প্রথম জেলে যান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি দেখলেন, সাধারণ মুসলমানের স্বার্থ রা হচ্ছে না, তখন তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম গঠন করেন। জীবনে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের স্বার্থ রার সংগ্রাম করে গেছেন। ফলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, আদবকায়দা, চলন-বলন, ইতিহাস আজ খোলাখুলিভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ ধর্মমুক্ত রাষ্ট্রের পক্ষে অপর ভাগ ধর্মযুক্ত রাষ্ট্র ও রাজনীতির পক্ষে এক ভাগ সংবিধানকে ধর্ম ও আল্লাহ-মুক্ত রাখতে চায়, যারা নিজেকে শুধুই বাঙালি মনে করেন। এরা মনে করেন ধর্ম ব্যক্তিগত, রাষ্ট্র সবার। আরেক ভাগ নিজেদের বাঙালি মুসলমান মনে করেন। তারা ভৌগোলিক ও ধর্মীয় কারণে নিজেদের বাংলাদেশী মনে করেন। ধর্মীয় কারণে নয়, শোষিত ও নির্যাতিত মাইনরিটির (মুসলমান) স্বার্থ রার জন্য পাকিস্তান সৃষ্টি। আর ’৭১ সালে অর্থনৈতিক শোষণের কারণে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দৃশ্যত মনে হয় ভারত খণ্ডিত হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। এখানে ইসলাম বা মুসলমানের কোনো বিষয় ছিল না। ইসলাম বা মুসলমানিত্ব কাউকে বা দুর্বলকে শোষণের অধিকার দেয় না। রাষ্ট্রের মতা ব্যবহার করে যখন মতাবানেরা মানুষের অধিকার হরণ করে ও অত্যাচার করে তখন জনসাধারণ কী করে? ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখনো শোষণ ও অত্যাচার অব্যাহত আছে। কখনো ধর্মের নামে, আর কখনো গণতন্ত্র রার নামে। মতাসীন জোট বা দল নিজেদের ভাষাভিত্তিক জাতি ও নাগরিক মনে করেন। এরা আরবি নামের নাগরিক। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা ধর্মীয় মেজরিটির রাজনীতিতে এরা বিশ্বাস করেন না। ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাস না করলেই আপনি জিহাদি, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী, গোঁড়া বলে চিহ্নিত হবেন আর সরকার (বৈধ বা অবৈধ) যা-ই হোক, রাষ্ট্রের স্বার্থ রার নামে আপনার ওপর অত্যাচার চালাবে। আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করবে। ধর্মচর্চার স্বাধীনতা ও অধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তবুও ইসলাম আজ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত। মুসলমানেরাই টেরোরিস্ট। ধর্মমুক্তরা রাজনীতির কারণে আল্লাহু আকবার না বলে আল্লাহ সর্বশক্তিমান বলে থাকেন। এরা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস না করে মানুষের সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন। যাদের কুরআন ও রাসূল সা:-এ বিশ্বাস তেমন দৃঢ় নয় তারাই আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না। এসব মৌলিক বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য না থাকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। মতাসীন সরকার ও নেতারা ব্যক্তিগত জীবনে ও পারিবারিক জীবনে ধর্ম চর্চা করেন বলে বহুল প্রচারিত, কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তারা ধর্মমুক্ত। মতাসীনেরা তাদের রাজনৈতিক দর্শনকে স্থায়ী রূপদান করার জন্যই মতায় থাকতে চান। তাও আবার গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দিয়ে। তাদের এই দর্শনকে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে দিল্লি সরকার। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বিজেপি তাদের রাষ্ট্রীয় দর্শনের কারণেই মতাসীনদের জোর করে, ব্ল্যাকমেইল করে মতায় রাখতে চায়। মতাসীনেরা ওদের সেবাদাসের ভূমিকা পালন করছে।
ধর্মমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা ১৯৯৬ সালে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করেছে, বিমান অফিস ধ্বংস করেছে, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আগুন দিয়েছে, নির্বাচনের দিন কারফিউ ঘোষণা দিয়েছে, তারা আজ সাধু হয়ে গেছে। সেই একই গ্রুপ বা দল ও গোষ্ঠী ২০০৬ সালে খুন-খারাবি করে অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে ধর্মমুক্ত রাজনীতির নেতা ও গুরুদের আহ্বানে তার দলীয় কর্মীরা বেলা ১১টায় লগি-বৈঠা নিয়ে প্রতিপ দলের রাজনৈতিক কর্মীদের সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অনেক কর্মীকে হত্যা করে ও বহু মানুষকে জখম করে পঙ্গু করে দেয়। তার বিচার আজো হয়নি। কেন হয়নি বা হচ্ছে না দেশবাসী ভালো করেই জানেন। সারা বিশ্ব এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য টিভির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপ দল বা মতকে হত্যা করার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ২৮ অক্টোবর। ধর্মহীন আরবি নামধারী আর সনাতনিরা মনে করেন, শক্তিই আসল মতার উৎস। শক্তি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মেজরিটিকে দমন করে রাখা যায়। ষড়যন্ত্রের কারণেই কাইভ নবাবের ৫০ হাজার সৈন্যকে পরাজিত করতে পেরেছিলেন। কারণ, কাইভ অখণ্ড জাতিকে হিন্দু মুসলমানে বিভক্ত করতে পেরেছিল।
মতাসীন দল বা জোটের সৃষ্ট সেই নৈরাজ্যকর অবস্থার অদৃশ্য ও পেছনের শক্তিরা পরে ভারতের সহযোগিতায় রাষ্ট্রমতা দখল করে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করে। আজ এরা পরবাসী। তখন দিল্লির খাস প্রতিনিধি পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় দেখাশোনা করতেন। জেনারেল মইন তখন নানা ধরনের নাটক করে শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে তথাকথিত নির্বাচন করেন আওয়ামী লীগকে মতায় বসানোর জন্য। যেমন লর্ড কাইভ দৃশ্যত কিছু বেইমান মুসলমান ও সনাতনধর্মীদের হাত করে পলাশী যুদ্ধের নাটক বানিয়েছিল। সেই নাটকে জেনারেল মীরজাফর আলী খানকে গদিতে বসানো হয়। লর্ড কাইভ কোম্পানির সদর দফতরের অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক খেলা খেলেছিলেন। ফলে কাইভের শাস্তি হয়েছিল। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। বাংলাদেশের েেত্র জেনারেল মইন দিল্লির পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মতা দখল করেছিলেন। জেনারেল মইনকে স্থানীয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন দিল্লির অনুগত ও সেবাদাস কিছু দল ও গোষ্ঠী। ভারতের সেবাদাস জেনারেল মইনের মূল ল্য ছিল জিয়াপরিবারকে ধ্বংস করে ভারতের অনুগত রাজনৈতিক দল ও নেতাদের চিরস্থায়ীভাবে মতায় বাসানো। সে সময়ে মইন নিজেই তার অবৈধ অধিকৃত মতা বলে নিজেকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে দিল্লিতে লাল গালিচার সংবর্ধনা ও ছয়টি ঘোড়া উপহার পেয়েছিলেন। জেনারেল আইউবও নিজেকে ফিল্ডমার্শাল প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন। ’৮২ সালে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উচ্ছেদ করে মতায় এসে জেনারেল এরশাদ বলেছিলেন, তিনি দিল্লির সাথে কথা বলেই মতা দখল করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বলেছিল তারা অসন্তুষ্ট নন। ভারতের কাগজ লিখেছিল ‘বন্দুকের নলে প্রজাপতি’। ২০০৮ সালে দিল্লির সেবাদাসরা মতা দখল করে জেনারেল মইনকে মা করে দিয়েছিলেন।
আবার ভারতের পরামর্শেই সেবাদাসরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বশংবদ নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেন। সে সময়ে সরকারি হিসাব মোতাবেক ৮০ শতাংশ ভোটার নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ১৫৪ জন বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্মমুক্ত দল ও জোট এখন মতায় আছে, সেই ভোটারবিহীন নির্বাচনের জোরে। আমাদের মহা পবিত্র ধর্মমুক্ত সংবিধান বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার তাদের সে অধিকার দিয়েছে। ভোট লাগবে না, শুধু গণতন্ত্রের নামাবলি থাকলেই চলবে। যেকোনো উপায়েই হোক, প্রধানমন্ত্রীর পদটা পেলেই তো সাংবিধানিকভাবেই একজন মোগল/ রোমান/পারস্য বা রাশিয়ার জার সম্রাট। গত বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের নামে রাষ্ট্র কয়েক শ’ নাগরিককে হত্যা করেছে। এখন বলা হচ্ছে রাষ্ট্র ও জনগণকে রা করার জন্যই তা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মমুক্ত/ধর্মহীন দল ও জোট নেতারা হলেন বৈদিক যুগের আর্যঋষিদের মতো। তারাই ভূমিপুত্র দেশপ্রেমিকদের রাস বানিয়েছেন। তাদের বিপ শক্তিকে শূদ্র বা অর্ধমানবে পরিণত করেছে। আর্য ত্রিয় নেতা রাজা দশরথের পুত্র রামকে রাজা ও দেবতায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশে এখন সেই রাজনীতির ধারা চালু হয়েছে।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক

No comments

Powered by Blogger.