পুরোনো ধাঁচের শাসনের জন্য হেরে গেল ইসলামপন্থীরা?

নিদা নেতা : বেজি কায়েদ আসেবসি
ও এন্নাহাদা নেতা: রশিদ ঘানুচি
‘আরব বসন্তের’ সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত তিউনিসিয়ার গত রোববারের সাধারণ নির্বাচনে সেখানকার প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল নিদা তিউনিস শীর্ষস্থান পেয়েছে। তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামপন্থী দল এন্নাহাদা পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে গতকাল মঙ্গলবার ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। বিশ্লেষক মহলে এখন আলোচনা চলছে এর ফলাফলের তাৎপর্য নিয়ে। খবর সিএনএন, এএফপি, বিবিসি ও আল-জাজিরার। নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কোনো দলেরই নেই বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। ২০১১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিপ্লব-পরবর্তী তিউনিসিয়ায় প্রথম নির্বাচনে এন্নাহাদা শীর্ষ অবস্থানে ছিল। এবার তাদের পরাজয়ের কারণ কী? তিউনিসিয়ার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ ভিন্ন মতাদর্শ (ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মভিত্তিক) লালন করে। তাদের জনপ্রিয়তার ভিন্ন মাত্রায় সেখানকার রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রকাশ ঘটে। এটি দেশটিতে বাস্তব পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং জিহাদি আদর্শের মতো বিষয়গুলো তিউনিসিয়ার এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং সামাজিক নানা সমস্যাও আলোচিত হয়েছে। ৬১ বছর বয়সী ভোটার ফাতি বাকলুতি ভোট দিয়েছেন নিদা তিউনিসের পক্ষে। তিনি ইসলামপন্থীদের ‘পুরোনো ধাঁচের শাসনব্যবস্থার’ সমালোচনা করে বলেন, দেশের তরুণদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বেকার। বিপ্লবের পর দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর বেন আলী যুগের মতো দুর্নীতি অব্যাহত থাকায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হচ্ছে। বাকলুতি আরও বলেন, তিনি নিজের সন্তানদের নির্মাণকাজের মতো পরিশ্রমের জীবিকায় যু্ক্ত করেছেন, যাতে সালাফিপন্থীরা তাদের মগজধোলাই করতে না পারে।
বাকলুতির অভিযোগ, অর্থ ও বৃহত্তর ‘অঙ্গীকারের’ লোভ দেখিয়ে কট্টর ইসলামপন্থার দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে তরুণদের। সংবাদমাধ্যম সূত্র জানায়, তিউনিসিয়ার তিন হাজারেরও বেশি যোদ্ধা সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের পক্ষে লড়াই করছে। আইএসের পক্ষে যুদ্ধরত বিদেশিদের মধ্যে তিউনিসীয়দের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। রাজধানী তিউনিসের আশপাশের বিভিন্ন মসজিদে তরুণদের সালাফি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এন্নাহাদাকে হারিয়ে উল্লসিত নিদা তিউনিস। আর এন্নাহাদার নেতা রশিদ ঘানুচি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফলে যে দলই শীর্ষে পৌঁছাক, মূল বিষয় হলো তিউনিসিয়ায় একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রয়োজন। নির্বাচনের পর রক্ষণশীল ইসলামপন্থী নেতারা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানোয় তিউনিসিয়ার রাজনীতিতে নতুন ধারার প্রচলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইসলামি চেতনা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে সেখানে একধরনের সমঝোতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ‘আরব বসন্ত’ প্রভাবিত অন্যান্য দেশে এ ধরনের সহাবস্থান দেখা যায়নি। অংশত এ কারণে সেসব দেশে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে তিউনিসিয়ার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে তা আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করায় অবদান রাখবে বলে মনে করেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ডোরকিন। তাঁর মতে, আরব বিশ্বের অন্যান্য স্থানে রাজনৈতিক সংস্কার ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার আশা ফিকে হয়ে গেলেও তিউনিসিয়ায় অদূর ভবিষ্যতে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.