আমিরাত থেকে সুসংবাদ নেই by মিজানুর রহমান

প্রত্যাশা ছিল অনেক। প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন- আমিরাতে বাংলাদেশীদের বন্ধ দরজা খুলবে। বিশেষ করে শ্রমবাজারে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশে শ্রমিকরাও যাবে। ভিসা নিয়ে সব রকম জটিলতার নিরসন হবে। আকামা পরিবর্তনও সহজ হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও এমনটাই আভাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে। বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন, হাই প্রোফাইল ওই সফরে শীর্ষ পর্যায়ে এটি আলোচনা হবে। দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশীদের প্রবেশাধিকার প্রশ্নে সৃষ্ট যাবতীয় সঙ্কটের সমাধান হবে। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছিলেন, এটি হবেই। তাদের সুর ছিল এমন যে, এটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে শীর্ষ বৈঠকের পর এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসা কেবল বাকি। কিন্তু কি হয়েছে? তিন দিনের সফরে শেষ দিনে আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের। অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনার ধাবাহিকতায় একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। ৩৮ লাইনের ওই ইশতেহারে ৩৭৭ শব্দে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার সার-সংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আর যা-ই থাকুক বাংলাদেশীদের জন্য আমিরাতের ভিসা চালু কিংবা এ সংক্রান্ত আলোচনার একটি শব্দও নেই। ‘উভয় দেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে’ মর্মে ইশতেহারের ২৩ নম্বর লাইনে বিষয়টির উল্লেখ করা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে কি আলোচনা হয়েছে তার কোন বর্ণনা নেই। সোমবার বিকালে দুবাইতে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যত প্রশ্ন এসেছে তার বেশির ভাগই ছিল ভিসা সংক্রান্ত। অব্যাহত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, আমিরাতের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ অবদান রাখতে পারে জানিয়ে এ দেশে থেকে শ্রমিক নেয়ার অনুরাধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক কোন প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার না করে বিষয়টি দু’দেশের কর্মকতাদের আলোচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমিরাত সফরের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় খোদ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরাই হতাশ। দেশটিতে থাকা বাংলাদেশীরা তো বটেই দেশেও এ হতাশার ঢেউ লেগেছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মের সন্ধানে দেশটিতে যেতে আগ্রহী এমন ব্যক্তি ও তাদের স্বজন-শুভানুধ্যায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন হতাশ হয়েছেন। পেশাদার এক কূটনীতিক গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে বলেন, হতাশা নানা কারণে। আরব আমিরাতে দ্বিপক্ষীয় সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কোন বৈঠক বা সাক্ষাতের শিডিউল ছিল না। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তারা। মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট নিয়ে বিশেষ করে আইএস বিরোধী অবস্থান নিয়ে কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। বাংলাদেশ এত দিন তার অবস্থান স্পষ্ট না করলেও দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশ তার অবস্থান অনেকটা স্পষ্ট করেছে। অন্য দিকে যেটি প্রত্যাশা ছিল সেই ভিসা চালু নিয়ে একটি শব্দও নেই দীর্ঘ ওই ঘোষণায়। বরং প্রধানমন্ত্রীর তরফে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার ওপর ঠেলে দিয়ে যে কূটনৈতিক জবাব এসেছে তাতে বিষয়টি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঝুলে গেছে বলে মনে করেন ওই কূটনীতিক। কেবল কূটনীতিকই নয়, প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এমন এক ব্যবসায়ী বলেন, দল মত নির্বিশেষে সবার মধ্যে একটি আশার সৃষ্টি হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে আমিরাতে শ্রম বাজার খুলবে। কিন্তু এর কোন আলামত না পাওয়াটা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। নারী শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমালা গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি এবং ঢাকায় একজন লেবার এট্যাশে নিয়োগের বিষয়টি স্মরণ করে ওই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, নারী শ্রমিক তো দেশটিতে যাচ্ছেন। ওই সমঝোতার ফলে আরও ১০০০ নতুন নিয়োগ যাবে। কিন্তু পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। অন্যান্য ভিসা নিয়েও জটিলতা আছে। সবাই আশা করেছিল সরকার প্রধানের সফরে এসব জটিলতা কাটবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিশেষ করে শ্রমিক নিয়োগে কোন সর্বজনীন চুক্তি বা সমঝোতা তো নয়ই, ন্যূনমত অঙ্গীকার বা ঘোষণা না থাকায় দেশ-বিদেশের বাংলাদেশীরা হতাশ হবেন বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.