মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী স্মরণে

মাওলানা মনিরুজ্জমান ইসলামাবাদী জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে অবিস্মরণীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সাহিত্য, রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার েেত্র যিনি অপরিসীম অবদান রেখেছেন, তাকে ভুলে যাওয়া মানে ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে ভুলে যাওয়া। ১৯৫০ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন ১৯৫৭ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত স্মরণসভায় মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ বলেছিলেনÑ ইসলামাবাদীকে স্মরণ করার অর্থ হলো; আজ জাতি তার অতীতকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছে এবং অতীতের সংগ্রাম, দেশনায়ক, মনীষী ও কৃতীদের প্রতি সশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘মাওলানা ইসলামাবাদী’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে লিখেছেনÑ ‘মাওলানা ইসলামাবাদী, মওলানা আকরম খাঁ প্রমুখ ব্যক্তির সাথে ১৯১৩ সালে আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালা প্রতিষ্ঠা করেন। আমিও ওই সমিতির সাথে যুক্ত ছিলাম। আঞ্জুমানের কাজে আমাকে মাওলানা সাহেবের অনেক সংশ্রবে আসতে হয়। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন, আমিও তাকে ভক্তি করতাম। এর ভেতরের কথা হচ্ছে, আমরা উভয়েই যুক্তিবাদী ইসলামে বিশ্বাসী ছিলাম। ১৯১৪ সালে আমি বিএ পাস করি। সেই বছরে তার (ইসলামাবাদী) নির্দেশক্রমে আমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিকের পদ গ্রহণ করি। ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালার তৃতীয় অধিবেশনে আমি মাওলানার আমন্ত্রণে যোগদান করি। ১৯১৯ সালে মাওলানা সাহেব আঞ্জুমানে ওলামার কার্য উপলে আসাম গমন করেন। তিনি খাসিয়া জাতির মধ্যে খ্রিষ্টান মিশনারিদের কার্যের সফলতা দেখে সেখানে একটি ইসলাম মিশন কায়েম করার উদ্যোগী হন। তিনি আমাকে এই কার্য্যভার গ্রহণ করতে পত্র লিখেছিলেন। আমি সানন্দে তার প্রস্তাব গ্রহণ করি। ১৯২৩ সালে যখন উত্তর ভারতে শুদ্ধি আন্দোলন শুরু হয়, তার ফলে কয়েক হাজার মুসলমান মালকানা রাজপুত হিন্দু হয়ে যায়। মাওলানা ইসলামাবাদী আলেম ছিলেন; কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি যুক্তিবাদী, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পপাতী। তিনি ছিলেন সমাজসেবক ও সমাজের কর্মী। নানা অর্থকষ্টের মধ্যেও তিনি সাহিত্যসাধনা ও সমাজসেবা করে গিয়েছেন। তাঁর শেষ কাজ ছিল চট্টগ্রামে একটি এতিমখানা স্থাপন, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চট্টগ্রামের নিকটবর্তী দেয়াং পাহাড়ে বিস্তৃত জমিও সংগ্রহ করেছিলেন।’ তার সম্পাদিত সোলতান কাগজ পড়ে। মাওলানা সাহেব বাংলার মুসলিম সমাজকে জাগানোর জন্য কাগজকে বড় অস্ত্র মনে করতেন। তিনি ইংরেজি ও বাংলা আপন সাধনায় শিখে ১৮টি গ্রন্থ এবং বাংলা, আরবি, ফার্সি, ইংরেজিতে বহু প্রবন্ধ রচনা করেন। 
সোহেল মো: ফখরুদ্দীন
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, প্রত্নতত্ত্ব আলোকচিত্র মিউজিয়াম, চট্টগ্রাম

No comments

Powered by Blogger.